কাজিরবাজার ডেস্ক :
ওমরাযাত্রীদের বিমানের টিকিট সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট চক্র বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট ব্লক করে রেখে চড়া দামে বিক্রি করছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিয়ে কিনতে ওমরাযাত্রীদের গলদঘর্ম। যথা সময়ে বিমানের টিকিট না পেয়ে ওমরাযাত্রীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। হাবের একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
১৪৪০ হিজরিতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই লাখ ওমরাযাত্রী ওমরাহ কার্যক্রম পালন করেছেন। চলতি বছর সউদী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ওমরাহ এজেন্সিগুলো যাত্রীদের সউদী অংশের যাবতীয় খরচের অর্থ আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদী আরবে পাঠাতে হচ্ছে। ওমরাযাত্রী ও হজযাত্রীদের ওপর সউদী সরকার চলতি বছর থেকে জনপ্রতি তিনশ’ সউদী রিয়াল ট্যাক্স ধার্য্য করেছে। এতে ওমরার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একাধিক ওমরাহ এজেন্সির স্বত্ত্বাধিকারী এতথ্য জানিয়েছে।
পাঁচটি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ায় সিন্ডিকেট চক্র ওমরাহ টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জেড এয়ার, ইত্তেহাদ এয়ার, ওমরাম এয়ার, ফ্লাই দুবাই বাংলাদেশ থেকে তাদের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রেখেছে। রাজনৈতিক কারণে কাতার এয়ারওয়েজ ও বাংলাদেশ থেকে সউদী আরবে যাত্রী পরিবহন করতে পারছে না। এতে ওমরাযাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকিট না পেয়ে ওমরাহ পালন করতে সউদীতে যেতে পারছে না।
এদিকে, প্রায় ৭০টি ট্রাভেলস এজেন্ট গত তিন মাসে বিমানের বিভিন্ন রুটের অগ্রিম টিকিট বুকিং দিয়ে তা’ বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে প্রতি মাসে বিমানের প্রায় ১১ % থেকে ১২% ক্যাপাসিটি লস হয়েছে। ফলে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষ গতকাল এক বৈঠকে প্রায় ৩৯টি ট্রাভেলস এজেন্টের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের জরিমান অথবা এজেন্টের আইডি বন্ধ করে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছে। রাতে বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। গত জুলাই মাসে বিমানে টিকিট বুকিং দিয়ে শতকরা ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ টিকিট বাতিল করেছে মৌরি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ইন্ডিপেনডেন্ট এয়ার টিকিট বুকিং দিয়ে হাতে গোনা কিছু বিক্রি করে ৮২ দশমিক ১ শতাংশ টিকিটই বাতিল করেছে। অনুরূপ আরো যে সমস্ত ট্রাভেলস এজেন্ট বিমানে টিকিট বুকিং দিয়ে গত তিন মাসে বুকিং বাতিল করেছে তারা হচ্ছে, কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, শাহ আমানত হজ কাফেলা, সাদিয়া ট্রাভেলস, লতিফ ট্রাভেলস, মদিনা ইন্টারন্যাশনাল বিএ, ফারিয়েল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লিঃ, ভিজিটর গাইডস ট্রাভেলস এন্ড ট্যুর, ভিক্টরী ট্রাভেলস, সানডিয়াল ট্রাভেলস, স্টারলাইন্স ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, সানসাইন এক্সপ্রেস ট্রাভেলস, বোনানজা আরজে, এইচপিএস ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, ইউনিভারসেল ওভারসীজ লিঃ, বাংলাদেশ ওভারসীজ সার্ভিস, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কর্পোরেশন, ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস, এয়ার কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল লিঃ, ভেলেনচিয়া এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, বোনানজা আজে, স্কাই ট্রাভেলস, হাজী এয়ার এডি, ওয়ান স্টার ট্রাভেলস, ড্রীম স্কাই ইন্টারন্যাশনাল, রয়েল এয়ার সার্ভিসেস, দরবেশ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, ভেলেনচিয়া ট্রাভেলস, আমার ট্রাভেলস লিঃ, তাসফিয়া এভিয়েশন লিঃ, ইউরো মার্ট লিমিটেড, এইচএসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, ও ভিক্টোরী ট্রাভেলস লিঃ। অভিযুক্ত এসব ট্রাভেল এজেন্টের বিরুদ্ধে বিমান কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। বিমানের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিরাও এসব অভিযুক্ত এজেন্টের সাথে দহরম-মহরম সর্ম্পক রয়েছে।
আটাবের সিনিয়র সহসভাপতি আসলাম খান ওমরাযাত্রীদের টিকিট সিন্ডিকেট চক্রের দখলে চলে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রতি বছরই ওমরাহ ও হজযাত্রীদের বিমানের টিকিট ব্লক করে রেখে একটি গোষ্ঠী কালো টাকার মালিক হচ্ছে। তিনি ওমরাযাত্রীদের টিকিটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। বুধবার হাবের সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা রুহুল আমিন মিন্টু ৪৫ জন ওমরাযাত্রীর জন্য আগামী ২৫ এপ্রিল কুয়েত এয়ারওয়েজ এর টিকিট ক্রয়ের জন্য আটাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফের কাছে ধরণা দিয়েও টিকিট পাননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন এয়ার লাইন্সের ওমরাযাত্রীদের টিকিট সিন্ডিকেট চক্র ব্লক করে রেখেছে। তিনি সিন্ডিকেটের কালো থাবা থেকে ওমরাযাত্রীদের মুক্ত রাখতে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। কুয়েত এয়ারওয়েজের কয়েক মাসের টিকিট আটাবের কয়েকজন নেতা নাকি ব্লক করে চড়া দামে বিক্রি করছে।