প্লাস্টিক বর্জ্য এখন সারা দুনিয়ার মাথাব্যথার একটি বড় কারণ, বাংলাদেশও সেই পরিণতির বাইরে নয়, সর্বত্রই পরিবেশের জন্য প্লাস্টিককে এক নম্বর শত্রু বিবেচনা করা হচ্ছে, মাটিদূষণ, জলাশয়ের চরিত্র বদলে দেওয়া, পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা, জলজ প্রাণী ধ্বংস করাসহ বহুবিধ ক্ষতি হচ্ছে এই প্লাস্টিক দিয়ে
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্লাস্টিকের এই অবাধ প্রবাহ বন্ধ করা না গেলে আগামী দু-তিন দশকের মধ্যে বিশ্বে রীতিমতো বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, তাই দুনিয়াব্যাপী প্লাস্টিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে প্লাস্টিক কিংবা পলিথিনের ব্যবহার কমছে না
কারণ পণ্যটির ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এমনভাবে মিশে গেছে যে চাইলেই চট করে একে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে বিকল্প হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ বাড়ানো, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি, বাংলাদেশে প্লাস্টিকশিল্পের অনেক বড় বাজার রয়েছে
এর পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে কয়েক লাখ মানুষের জীবন, কিন্তু দুঃখজনক হলো যে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাস্টিকের একটি ক্ষুদ্র অংশ বা মাত্র ৩৬ শতাংশ রিসাইকল হয়, বাকি ৬৪ শতাংশই পরিবেশকে দূষিত করছে, প্রতিবছর প্রায় সোয়া আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়
অপচনশীল এসব বর্জ্য কৃষিজমি, জলাভূমিসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে, রিসাইকলের মাধ্যমে এই ক্ষতি বহুগুণে কমিয়ে আনা যেত, গত বুধবার সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)-এর উদ্যোগে ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট রিসাইক্লিং : ইনভেস্টমেন্ট প্রসপেক্টস, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়, সেমিনারে দাবি করা হয়, সরকারের নীতি সহায়তা পেলে প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আরো ১২০ কোটি ডলার আয় করা যেত, পাশাপাশি আরো বহু মানুষের কর্মসংস্থান হতো, রাস্তাঘাটে, দুই বাড়ির মধ্যখানে, হাট-বাজারে যেখানেই তাকানো যায় না কেন, দেখা যাবে প্লাস্টিক আর প্লাস্টিক, প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার একটি বড় কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমে ড্রেন, খাল বন্ধ হয়ে যাওয়া, আরো অনেক ক্ষতির কারণ এই প্লাস্টিক বর্জ্য, জানা যায়, প্লাস্টিকশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, আমরা আশা করি দ্রুত সেই নীতিমালা সরকারের অনুমোদন পাবে, তার ভিত্তিতে দেশের এই শিল্প খাতকে যেমন এগিয়ে নিতে হবে, তেমনি রিসাইক্লিংসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরো বেশি জোর দিতে হবে।