এমপিওভুক্ত হচ্ছে তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ॥ প্রধানমন্ত্রী আজ ঘোষণা দেবেন

42

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দীর্ঘ নয় বছর পর অবশেষে খুলতে যাচ্ছে নতুন বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওর (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) দ্বার। এমপিওভুক্ত হতে পারে প্রায় তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেবেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় রজ্ঞাপন জারি করবে। শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সুখবর হচ্ছে, গত জুলাই থেকেই এমপিওভুক্তি কার্যকর হবে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপিরও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। এখন থেকে প্রতিবছরই যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন প্রমুখ। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হয়েছিল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার এমপিওভুক্তির তালিকায় রয়েছে মোট দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সাধারণ স্কুল ও কলেজ রয়েছে এক হাজার ৬৫১টি। এছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন এক হাজার ৭৯টি মাদ্রাসা, কারিগরি, বিএম এবং কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে শেষের ২৮৩টি বাদ দেয়া হয়েছিল। পরে অর্থের সংস্থান করে এমপিওভুক্তির তালিকায় আনা হয়েছে।
নীতিমালার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি করা হয়েছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যোগ্যতা ধরে রাখতে না পারলে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিও সাময়িক বাতিল করা হবে। পুনরায় যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে আবারও এই সুবিধার আওতায় আনা হবে। এমপিও পেয়ে গেছে ভেবে হাল ছেড়ে দিলে তারা বিপদে পড়বেন। নতুন-পুরনো সব প্রতিষ্ঠানকে নিবিড় মনিটরিঙের আওতায় আনা হবে, জানান মন্ত্রী।
নতুনভাবে সাধারণ, কারিগরি, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এমপিওভুক্তির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। তবে এবার কত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে, সেটি উল্লেখ না করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ২০১০ সালে যে পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল, সেটার দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠানকে এবার এমপিওভুক্ত করা হবে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলতি বছরের জুলাই থেকে সরকারী অর্থ সুবিধা দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে প্রতিবছর এমপিওভুক্তির কার্যক্রম চলমান থাকবে। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর যোগ্য বলে বিবেচিত হবে তাদের এমপিওভুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর যেসব প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে থাকবে তাদের সহযোগিতা করে এগিয়ে আনা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা অর্জন হলেই এমপিওর আওতায় আনা হবে। যোগ্য বিবেচিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির বাইরে থাকবে না।২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকে এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন।
এখনও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন নীতিমালা বাতিল করে পুরোনো নিয়মে স্বীকৃতি পাওয়া সব বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত সোমবার থেকে তারা আমরণ অনশন শুরু করেছেন।
এমপিওর কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য আবেদন করলেও তাদের মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব বেশি নেই। এমপিও’র জন্য প্রযোজ্য চারটি শর্ত পূরণ করতে পেরেছে মাত্র এক হাজার ৫২৯টি প্রতিষ্ঠান। তবে আরও প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় এনে দীর্ঘ ৯ বছর পর খুলছে এমপিওর দ্বার।
২০১০ সালের পর গত ৮ বছরে এমপিওভুক্ত হয়নি কোন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ এই সময়ে ৭ হাজারের বেশি বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১০ সালের আগে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানও আছে প্রায় তিন হাজার। সব মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি সরকার স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান আছে এমপিওর অপেক্ষায়।
এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করছেন এমপিওর জন্য। ২০১১ সাল থেকেই চলছে এমপিওর দাবির আন্দোলন। বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্যরাও নিজ এলাকার প্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য একই দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
জানা গেছে, হাওর-বাঁওর, পাহাড়ীসহ দুর্গম এলাকা ও নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত হতে যাচ্ছে সরকার স্বীকৃত বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর নতুন ও পুরাতন এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা হিসেবে সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।