জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি’ বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে মিয়ানমারে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দি মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহŸান জানানো হয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এর পর থেকে স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। কঠিন প্রহরা সত্তে¡ও তাদের ক্যাম্পে রাখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ তো ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যু এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রæততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গারা ফেরত না গেলে শিগগিরই এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ তার নিজের স্বার্থেই কখনো জঙ্গি, সন্ত্রাসী বা অন্য দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। এ ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। কিন্তু এত বিশালসংখ্যক উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী, যেখানে দেশ-বিদেশের অসংখ্য এনজিও এবং বহু পক্ষ সংগত কারণেই জড়িত, সেখানে বাংলাদেশ সরকারের শতভাগ সদিচ্ছা থাকলেও সব অপতৎপরতা ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। সেটা সম্ভবও নয়। বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব এনজিও এবং সংগঠন এখানে এসেছে, তাদের সমন্বয় করার জন্য যথেষ্ট কার্যক্রম কি নেওয়া হয়েছে? তারা কে কী করছে, কী ধরনের মতবাদ নিয়ে এসেছে, সে সম্পর্কে কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট ওয়াকিফহাল?
স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাÑদুটি নিয়েই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অভ্যন্তরে বহু ভাগে বিভক্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রæপের উৎপত্তি ঘটেছে, তদুপরি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ নেটওয়ার্ক তৈরিতে তৎপর রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও তাদের দলে টানার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের মতো একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করা সম্ভব নয়। স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গারা হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। কাজেই ক‚টনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে।