কাজিরবাজার ডেস্ক :
ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে সারাদেশে একই মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এক দেশ এক রেট হতে হবে। দেশের এক অঞ্চলে এক রেট অন্য অঞ্চলে আরেক রেট হতে পারে না। প্রয়োজনে এজন্য সরকার ভর্তুকি দেবে। সরকার তো বসেই আছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন করার জন্য। ভর্তুকি দিয়ে হলেও যদি দেশে দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরি হয়-তাহলে এই ভর্তুকি তখন বড় লাভজনক হয়ে উঠবে। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল লা ভিঞ্চিতে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) আয়োজনে টেলিকম খাতের ‘বর্তমান ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ কথা বলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমানে আমরা এক হাজার ২ শ’ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। দিন যত যাচ্ছে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বাড়ছে। যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করব, সরকারের পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেব না, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই গাইড লাইন চূড়ান্ত করছি। সমস্যা কোথায় এবং এর সমাধান কি হবে এসব নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে ট্রান্সমিশন প্রতিষ্ঠান এনটিটিএন ও ইন্টারনেট সেবাদাতা আইএনপিদের একে অপরকে দোষারোপ না করে সমস্যা সমাধান করার কথাও বলেন মন্ত্রী।
সরকারের সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রাম শহর হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গ্রাম শহর হওয়ার মানে হচ্ছে ডিজিটাল গ্রাম হবে, শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে হবে, যে ইন্টারনেট স্পিড শহরে হবে তা গ্রামেরও করতে হবে। শহরের বাইরে কেন বাড়তি পয়সা দিতে হবে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রান্সমিশন কোম্পানি এনটিটিএনদের জন্য খরচ বাড়ছে এই খরচ যেন গ্রাহকের ওপর না পড়ে, সেটা সরকার দেবে না কি হবে তা ঠিক করতে হবে।
সারাদেশে ইন্টারনেট একই মূল্যে করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এক দেশ এক রেট করতে হবে, সবাই যেন নিশ্চিত করতে পারি। কোন জায়গায় ভর্তুকি দিতে হলে দেব। ছেলেমেয়েরা ভর্তুকি পেয়ে যদি এগিয়ে যায় তাহলে সে জায়গায় অবশ্যই আমরা যাব। ইন্টারনেট সেবায় শুধু অপারেটরদের নয়, এনটিটিএনদেরও ধরতে হবে। যেটুকু অপারেটর ও এনটিটিএনদের ক্ষমতায় আছে তা জনগণকে সর্বাচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে, কোন রকমের অজুহাত দেয়া যাবে না। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যে কোনভাবেই ৫জিতে আমাদের যেতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিতে পিছিয়ে যাওয়ার রিস্ক আমরা নিতে পারি না। যে বিজনেস প্ল্যান নিয়ে আপনারা এগিয়েছেন সে বিজনেস প্ল্যান আগামী ১০ বছর থাকবে না। ৫জি অনেক পরিবর্তন আনবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আসবে।
টিআরএনবির সভাপতি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সজলের সভাপতিত্বে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান জহুরুল হক, ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম, গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান, এ্যামটবের সাবেক সেক্রটারি টিআইএম নুরুল কবির, সামিট কমিউনিকেশন-এর প্রধান নির্বাহী আরিফ আল ইসলাম। গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, গত ১০ বছরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমরা চাই আপনারা ভাল ব্যবসা করেন, গ্রাহকরা যেন ভাল সেবা পায়। ব্লেইম গেম না করে এ সেক্টরে সবাই একযোগে কাজ করতে হবে। আপনারা আলোচনা করেন এবং যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো নিষ্পত্তি করেন।
ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপি এ্যাসোসিয়োশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, ঢাকার বাইরে সেবা নিয়ে যেতে পারছি না কারণ সেখানে ট্রান্সমিশন খরচ দিয়ে বেশি হয়, ঢাকায় যেটা এক হাজারে দিতে পারি সেখানে তা আড়াই হাজারের বেশি হয়। ট্রান্সমিশন খরচ বেশি হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এনটিটিএন-এর উপর নির্ভর করে আমাদের বিজনেস মডেল করতে হচ্ছে। ট্রান্সমিশন খরচ বেশি হওয়ায় এবং স্থানীয় মাস্তানদের জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস দিতে পারছি না। ট্রান্সমিশন লাইসেন্স আইএমপিএ দিলে এ খরচ কমে আসবে।
গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, ৭ কোটি মানুষের বেশি গ্রাহককে আমরা কোয়ালিটি অব সার্ভিস দিচ্ছি। ভ্যালু চেইনে যারা আছে তাদের সবারই একটা কিউওএস থাকতে হবে। আমাদের সামনের যে সম্ভাবনা, গ্রামে গঞ্জের যে সম্ভাবনা বা সংযোগ করতে হলে সবারই কিউওএস থাকতে হবে। মেজারমেন্ট ক্রাইটেরিয়া কি হবে, সেটা যদি একবার আমরা ডিফাইন করতে পারি, তাহলে কেউ কাউকে দোষারোপ করতে পারবে না। এক সঙ্গে কাজ করবে, তাহলে সেবার মান যথেষ্ট ভাল করা সম্ভব। অপারেটররা নিরবচ্ছিন্নভাবে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। জিপির এখন এমন একটি সাইটও নেই, যেখানে ডাটা কানেকশন নেই।
এ্যামটবের সাবেক সেক্রেটারি টিআইএম নুরুল কবির বলেন, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করাতে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটি গ্রাউন্ড লেভেল স্টাডি দরকার আসলে সমস্যাটা কোথায়। আমাদের কোন ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান নেই, এই প্ল্যান করে দেখতে হবে আমাদের লক্ষ্যটা কি, আর আমরা কোথায় যেতে চাচ্ছি। এনটিটিএনদের গতি আরও বাড়াতে হবে, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।