সিলেটে ৬ দিনে ৬ খুন

3

স্টাফ রিপোর্টার :
আ ফ ম কামাল হত্যা বিচ্ছিন্নভাবেই দেখছে সিলেট বিএনপি। গণসমাবেশকে সামনে রেখে কৌশলগত কারণেই সেটি মনে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। তবে এই হত্যা ঘটনা তারা ভুলছেন না। খুনের ঘটনার পর নেতারা দিয়েছিলেন আন্দোলনের হুমকি।
তবে এরই মধ্যে আসামি গ্রেফতার শুরু হওয়ায় ক্ষোভ কিছুটা কমেছে। তবে-কামাল হত্যা নাড়া দিয়েছে সিলেটবাসীকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন ঘটনা বিগত কয়েক বছরে সিলেটে ঘটেনি। এভাবে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে কুপিয়ে খুন করা হয়নি। এতে শুধু বিএনপিই নয়, আওয়ামী লীগসহ একাধিক দলের রাজনৈতিক দলের কাছে ঘটনাটি ভয়ের।
কারণ আ ফ ম কামাল অন্তত ২ যুগ ধরে সিলেটে রাজনীতি করছেন। ছাত্রদলের কর্মী থেকে বিএনপি’র পরিচিত নেতা। এখনো গ্রেফতার হয়নি প্রধান আসামি ছাত্রলীগ কর্মী আজিজুর রহমান সম্রাট।
এদিকে-শুধু সিলেটেই নয় গোটা বিভাগজুড়ে ঘটে চলেছে খুনাখুনির ঘটনা। ৬ দিনে ৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে সিলেট জুড়ে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। এই সময়ের মধ্যে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
৫ নভেম্বর কানাইঘাটে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হন মাসুম আহমদ নামের এক যুবক। কানাইঘাট উপজেলার বড়চতুল ইউনিয়নের চতুলবাজার দরবস্ত সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের পাশে ছুরিকাঘাতে মাসুম খুন হন।
৪ নভেম্বর রাস্তা নিয়ে বিরোধের জের ধরে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার পূর্ব বামৈ গ্রামের ইসহাক মিয়া নামের এক বৃদ্ধ নিহত হন। একইদিন হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রেম সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে আতিকুল ইসলাম মিশু নামের এক কলেজ ছাত্র নিহত হন।
২ নভেম্বর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের উত্তর মাঝেরগাঁওয়ে জমি নিয়ে বিরোধে ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হয় পুতুল সিংহ নামের এক ব্যক্তি। অপরদিকে ৬ নভেম্বর নগরীর পাঠানটুলা পল্লবী আবাসিক এলাকার সি-২৫ নম্বর বাসার ভেতর থেকে স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় দুটি অপমৃত্যু মামলা হলেও রিপন তালুকদার ও শিপা দাস নামের ওই দম্পতির মৃত্যুর রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
৩ নভেম্বর মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে অনার্স পরীক্ষা শেষে কলেজের শেখ হাসিনা ভবনের সামনে কুলাউড়া সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজন মিয়া মারা যান। একইদিন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ঝুমা আক্তার নামের ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। সে দিরাই ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আর সি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
৫ নভেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুর মনতলা রেলস্টেশনের অদূরে পৃথক স্থান থেকে আনুমানিক ৭০ বছর বয়সী এক নারী ও অজয় অধিকারী নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
৬ নভেম্বর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনের কাছ থেকে মধ্যবয়সী অজ্ঞাত এক ব্যক্তির খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, নগরীর আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা কামাল খুনের ঘটনার রাতেই ছাত্রদলের কর্মীরা মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের প্রতিনিধি সম্মেলনস্থল কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের আশপাশ এলাকায় ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় তারা নেতাকর্মীদের দেয়া তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের ছবিও ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রদলের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করে। পরে আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। সবমিলিয়ে এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ সারোয়ার বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপি’র ২০০ থেকে ২৫০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনার পর আসামিদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এদিকে- বিএনপি’র তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে ধরপাকড়ের। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতারা ইতিমধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধরপাকড় বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
তারা দাবি বলেছেন- বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ ভীতির সৃষ্টি করতে এই ধরপাকড় চালাচ্ছে। বিশেষ করে নেতাকর্মীদের বাসা বাড়িতেও অভিযান চালানো হচ্ছে। এ কারণেই অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে করে গণসমাবেশের আগে সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয় ও অস্থিরতা কাজ করছে। তবে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল খুন এবং স্টেডিয়াম এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর ও অবমাননাকারীদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিচ্ছে না সিলেটের পুলিশ। দুটি ঘটনায়ই আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।