সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি

5

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার ওপর পাশ্চাত্য দেশগুলো আরোপ করেছে নানামুখী নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে জ্বালানি, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হচ্ছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক মন্দার আলামত শুরু হয়ে গেছে। বৈশ্বিক মন্দার সেই ঢেউ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লেগেছে। সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ চেয়েছিল। আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে নানা রকম খোঁজখবর শেষে কিছু শর্তের ভিত্তিতে ঋণের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সাড়ে চার বিলিয়ন বা সাড়ে চার শ কোটি ডলার ঋণ পাবে। প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৪৭.৪৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া যাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই ঋণ বর্তমান সংকট মোকাবেলায় যেমন সহায়তা করবে, তেমনি আইএমএফ যেসব সংস্কারের সুপারিশ করেছে, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিই লাভবান হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমছে। আমাদের রপ্তানির বড় অংশ এখনো তৈরি পোশাক এবং এর প্রধান গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো। সেসব দেশেও মূল্যস্ফীতি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে সেসব দেশ পোশাক ক্রয়ের অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে। আর এতেই আমাদের রপ্তানি বড় ধাক্কা খাচ্ছে। এই পরিস্থিতি সহজে কাটবে বলেও মনে হচ্ছে না। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আরেকটি বড় উৎস রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়েও টান পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কবলে থাকা দেশগুলো থেকে এখন রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও কমছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমাদের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে। আইএমএফ ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। একই ধারায় বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং অন্যান্য ঋণ প্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকেও হয়তো ঋণ পাওয়া যাবে। তবে ঋণ গ্রহণ ও ঋণের ব্যবহার করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে।
আইএমএফ ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে সংস্কারের যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি যৌক্তিক ব্যয় ব্যবস্থা চালু করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক মুদ্রানীতি কাঠামো তৈরি করা, আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা, নজরদারি বাড়ানো, সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী করা, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, আর্থিক খাতে তারল্য বৃদ্ধি, মানবদক্ষতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করে ব্যাবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলা, পরিবেশের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া এবং জলবায়ুসংক্রান্ত খাতে বড় আকারে বিনিয়োগ ও আর্থিক সরবরাহ নিশ্চিত করা। আইএমএফ শর্ত দিয়েছে বলেই নয়, আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা এবং অর্থনীতির গতিশীলতা উন্নয়নের জন্যই এই শর্তগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।