সাজেদা চৌধুরীরা হাল ধরেছিলেন বলেই আ’লীগ আদর্শ হারায়নি – প্রধানমন্ত্রী

6
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের প্রথম দিন জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, গিয়াস উদ্দিন উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিষ্টার আবুল হাসনাত, বীর মুুক্তিযোদ্ধা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপিকা খালেদা খানমের মৃত্যুতে ২০তম অধিবেশনের শুরুতে আনিত শোক প্রস্তাবে বক্তব্য রাখেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সাজেদা চৌধুরীর মতো নিবেদিত নেতাকর্মীরা দলের হাল ধরে ছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ নীতি আদর্শ হারায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রয়াত সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি এ্যানী রহমানের ওপর আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগে যে অবদান রেখে গেছেন তা ভোলার নয়। চরম দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা ও দলকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করেছেন তিনি। সাজেদা চৌধুরী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগষ্টের পর তো আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন নেমে আসে। সাজেদা চৌধুরীও এর শিকার হন। জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করেন। তার অপারেশন হয়েছিল, গায়ে জ্বর ছিল এমন শারীরিক অবস্থায়ও জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠান। মতিয়া চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়। তিনিও অসুস্থ ছিলেন। তাদের ডিভিশনও দেয়নি। সাধারণ কয়েদির মতো তাদের জেলে রাখা হয়। এদেশের প্রত্যেকটি আন্দোলন, সংগ্রামে সাজেদা চৌধুরী সব সময় সামনে থাকতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমরা তাকে ফুফু বলে ডাকতাম। জিয়াউর রহমান আইন করেছিলেন পার্টির রেজিস্ট্রেশনে কারো নাম দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সাজেদা চৌধুরী ছিলেন অটল। তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া পার্টি হয় না। আমাদের দলের মধ্যেও কারো কারো দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিল কিন্তু এ ব্যাপারে অটল ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান, তাই তিনি এ আইন করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশে আসার পর তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সব কাজ তিনি সুচারুরূপে করতেন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী বানিয়েছিলাম। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়েছে, এর অবদান সাজেদা চৌধুরীর। তিনি সুন্দরবনকে সাজিয়েছিলেন। তিনিও পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রায় দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল। ৭৫-এর পর যে সংঘাত শুরু হয় সেই সংঘাতের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা ক্ষমতায় এসে শান্তি চুক্তি করি। ১৮০০ অস্ত্রধারী আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। কোথাও এটা দেখা যায় না। আমার প্রত্যেকটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সংবিধান সংশোধনেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি যখন করতাম তখন থেকেই তাকে চিনতাম। তিনি বেশি বয়সেও লেখাপড়া করছিলেন। তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারালো। আমি আমার চলার পথে তাকে সব সময়ই পেয়েছি। ফুফু বলতাম। তিনি চলে যাওয়াতে শুধু আওয়ামী লীগের নয় দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। বয়স হয়েছে আমাদেরও চলে যেতে হবে। একে একে সবাই ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বয়স হয়ে গেছে যেতেই হবে। হয়তো আমিও একদিন চলে যাব। তবে তিনি যেটা করেছেন আমাদের স্মরণ করতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আমাদের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, আমাদের বিরোধী দলের যারা আছেন, বিরোধী দলের নেতা যিনি রওশন এরশাদ, জেনারেল এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যারাই আছেন তারাও কিন্তু নির্যাতনের শিকার। সাজেদা চৌধুরী বা মতিয়া চৌধুরীকে গ্রেফতার করেন জিয়াউর রহমান, তাদের ডিভিশন দেওয়া হয়নি। ঠিক খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছিলেন। রওশন এরশাদ তিনি তো মাস্টার্স ডিগ্রি পাস। প্যানাল কোডে আছে মাস্টার ডিগ্রি পাস হলে ডিভিশন দিতে হয়। সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে তাকেও রেখেছিল। আমরা তো তাও খালেদা জিয়াকে অসুস্থ বলে বাড়ি থাকার নির্বাহী আদেশে তার শাস্তি প্রাপ্তি স্থগিত রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। একটা মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে, তিনি একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করেননি। বিমান বাহিনীর প্রধান জামাল উদ্দিন তাকে গ্রেফতার করে তার নামে একটা ঘরি চুরির মামলা দিয়ে কোনো ডিভিশন না দিয়ে মাত্র দুটি কম্বল দিয়ে তাকে জেলে পাঠিয়েছিল। এভাবে মানুষকে তারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। জাতীয় পার্টি বোধ হয় এখন সেই নির্যাতনের কথা ভুলেই গেছে। আওয়ামী লীগ তো সবার আগে নির্যাতিত। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ সবাই নির্যাতন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাজেদা চৌধুরীর মতো অসংখ্যা নিবেদিত নেতাকর্মীরা দলের হাল ধরে ছিলেন বলেই এ সংগঠন নীতি আদর্শ হারায়নি। নীতি-আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছে। আশাকরি আমাদের নেতারা প্রয়াত নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করেই সংগঠন করবেন।
এ শোক প্রস্তাবের আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য (এমপি) আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, আ স ম ফিরোজ, বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের, বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা, সংসদ সদস্য শাজাহান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং ওয়াসিকা আয়শা খান।