কাজিরবাজার ডেস্ক :
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্নের গোপনীয়তা রক্ষায় সতর্ক অবস্থানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন- ছাপানো থেকে শুরু করে পরীক্ষার হল পর্যন্ত প্রশ্ন পৌঁছে দিতে শিক্ষাবোর্ডগুলোকে নতুন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। নির্দেশনা অনুযায়ী এবার এইচএসসি পরীক্ষার জেলা পর্যায়ে প্রশ্ন সর্টিং করবেন জেলা ট্রেজারি কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থানা পর্যায়ে এ কাজ তদারকি করবেন।
আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। প্রশ্নফাঁসের গুজব ঠেকাতে এবার ৪২ দিন বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার। এরপর প্রশ্ন সর্টিং ও সংরক্ষণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নির্দেশনা এলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রামের ভূরাঙ্গামারীতে প্রশ্নফাঁসের তৎপরতা চালিয়েছিলেন শিক্ষক তথা কেন্দ্র সচিব।
ফাঁস করা প্রশ্ন ছড়িয়ে না পড়লেও চার পরীক্ষা স্থগিত করে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড। পরিবর্তন করা হয় দুই বিষয়ের প্রশ্ন। যা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয় ক্ষোভ ও হতাশা। প্রশ্ন ব্যবস্থাপনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেকেই আঙ্গুল তুলেছেন। যে কারণে পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে আরও সতর্ক করা হয়েছে শিক্ষাবোর্ডগুলোকে।
শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্ন সর্টিংয়ের কাজ উপজেলা পর্যায়ে ইউএনদের। কিন্তু ইদানিং ট্যাগ অফিসার হিসেবে উপজেলা পর্যায়ের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের দিয়ে এ কাজ করানো হয়। তবে এই দায়িত্ব এবার শতভাগ ইউএনওদেরই করতে হবে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিনদিন আগে এসব কর্মকর্তাকে প্রশ্নসর্টিং করতে হবে। এই কাজে কেউ বিন্দুমাত্র অবহেলা করলেও তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন একজন কেন্দ্র সচিব। সে কারণে কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে এরইমধ্যে তিন দফায় বৈঠক করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরীক্ষা শুরুর আগ পর্যন্ত নিয়মিতভাবেই এ মতবিনিময় বৈঠক চলবে। যারা কেন্দ্র সচিব আছেন তাদেরকে নানাভাবে সতর্ক ও দায়িত্ব পালনে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে নোটিসও দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, প্রশ্নসর্টিং শেষে উপজেলাতে প্রশ্নগুলো সংরক্ষণ করা হবে। যেদিন যে পরীক্ষা সেদিন উপজেলা পরিষদ থেকে কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্ন চলে যাবে।
এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেবে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী। গতবছরের চেয়ে যা প্রায় দুই লাখ কম। আগামী ৬ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ১৩ ডিসেম্বর। অর্থাৎ ৩৭ দিনেই শেষ হবে এইচএসসির লিখিত পরীক্ষা। ১৫ ডিসেম্বর ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২২ সালের সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এরমধ্যে দুইটি আবশ্যিক, তিনটি নৈর্বাচনিক এবং ৪র্থ বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় সময় ও নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কেউ মোবাইলফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।
১১টি শিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯ হাজার ১৮১টি প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে মোট ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এদের মধ্যে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন ছাত্র এবং ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন ছাত্রী আছে। দেশের বাইরে মোট আটটি দেশে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা আয়োজন করবে শিক্ষাবোর্ড। সেখানে ২২২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে। এরমধ্যে জেদ্দায় ৫১ জন, রিয়াদে ২০ জন, ত্রিপোলিতে ৪ জন, দোহায় ৬২ জন, আবুধাবিতে ২৭ জন, দুবাইয়ে ২১ জন, বাহরাইনে ১৫ জন এবং ওমানে ২২ জন।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও গতবছর করোনা মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়। এ অবস্থায় গতবছর প্রায় ৯ মাস পিছিয়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি আর ডিসেম্বরের শুরুতে নেওয়া হয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। তবে এ বছর করোনার ও বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়।