প্রতিপক্ষ আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ॥ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় বাংলাদেশ

10

স্পোর্টস ডেস্ক :
এমনটা আগে কখনো ঘটেনি। টি২০ বিশ্বকাপে মর্যাদার দ্বিতীয় পর্বে জয় পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু এবার প্রথম ম্যাচেই বিপর্যস্ত এক বাংলাদেশ জয় তুলে নিয়ে হয়ে উঠেছে উজ্জীবিত। সেই সঙ্গে প্রত্যাশার বর্ণিল ‘ফানুস’ আবার উড়তে শুরু করেছে। ভক্ত-সমর্থকরা যেমন আরও জেতার প্রত্যাশায় অধীর,তেমনি ক্রিকেটাররাও স্বপ্নে বিভোর সাফল্য তুলে আনতে। আজ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াই শুরু।
কখনো সিডনিতে না আসা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে এখানে জয়োৎসব করতে চান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ১৭৪ বছরের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এই মাঠে আজই প্রথম কোনো ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার যে কোনো শহরের চেয়ে সিডনিতে থাকা সর্বাধিক বাংলাদেশীই আরও বেশি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডে হওয়া ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ ও আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়ে দলের লক্ষ্য নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সহঅধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান দাবি করেছিলেন, ব্যর্থতার ভয়ে প্রত্যাশার কথা জানাতে শঙ্কা বোধ করেন তারা। সেই ক্রিকেটাররাই এখন আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে আবার প্রত্যয়ের সঙ্গে জয়ের আশা ব্যক্ত করছেন।
২০০৩ ও ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফর এবং ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। কেয়ার্নস, ডারউইন, ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, এডিলেড ও সর্বশেষ এবার হোবার্টে খেলেছে টাইগাররা। এমনকি অধিনায়ক সাকিব আগে বিগব্যাশ টি২০ দুই মৌসুম খেলেছেন মেলবোর্নের দুই মাঠ, এডিলেড ও হোবার্টে।
কিন্তু ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে একবারও খেলতে আসা হয়নি সিডনিতে। ১৮৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ভেন্যুটিতে অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৮১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে। যদিও ১৪০ বছর ধরে (১৮৮২ সালে প্রথম) আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে এই ভেন্যুতে। ধারণক্ষমতায় মেলবোর্ন, পার্থ ও এডিলেডের স্টেডিয়ামগুলোর চেয়ে কম হলেও ৪৪ হাজারের বেশি দর্শকে পরিপূর্ণ থাকবে আজ মাঠটি।
কারণ এই ম্যাচের টিকিট অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে বলে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই জানিয়েছে আইসিসি। সেই আগ্রহী দর্শকদের অধিকাংশই বাংলাদেশী হবেন তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণ এখানে উচ্চ শিক্ষার্থে, কর্মের জন্য এবং স্থায়ী হওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা এতই বেশি যে সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী হোন।
সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই আজ মাঠের গ্যালারিতে পতপত করে উড়বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। আর তাই সাকিব ম্যাচ শুরুর আগে বলেছেন, ‘আমি আশা করছি বেশ ভালো দর্শক আসবে যারা আমাদের সমর্থন করবে। তাদের সমর্থনের প্রতিদান যেন আমরা দিতে পারি সেজন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।’
একটি জয় পাল্টে দেয় যে কোনো দলকে। সাম্প্রতিক সময়ে টানা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশ দলকে নিয়ে যেমন সমালোচনা ও বিতর্ক ছিল তেমনি ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের মনেও বিশ্বাস কমে গিয়েছিল সাকিবদের নিয়ে। এমনকি ক্রিকেটাররাও যেন নিজেদের সামর্থ্য ভুলে বসেছিলেন।
এবার ডাচদের বিপক্ষে জিতে নতুন এক বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। এই ভেন্যুতে প্রোটিয়ারা ১১ টেস্ট ও ১৫ ওয়ানডে খেললেও কোনো টি২০ খেলেনি। বাংলাদেশ কোনো ম্যাচই খেলেনি। তবে ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আজ স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে নিশ্চিতভাবেই আগুনের ফুলকি ছুটবে। দারুণ উপভোগ্য পরিবেশ, নিজেদের পক্ষে অনেক দর্শক এবং ব্যর্থতা কাটিয়ে জয় দিয়ে শুরু করা উজ্জীবিত বাংলাদেশ এখন আরও বড় কিছুর আশায়।
প্রথম ম্যাচে হোবার্টের গড় রানের চেয়ে কম- ১৪৪ রান করেও বোলিং নৈপুণ্যে জিতেছে বাংলাদেশ। কারণ দীর্ঘ সময় পর ওপেনিং সমস্যা কাটিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন কুমার দাস ভালো শুরু দিলেও পরের দিকে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ হয়নি। নির্ভরযোগ্য ও ফর্মে থাকা লিটন কুমার দাস ও সাকিব ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বড় লক্ষ্য সাকিবের।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা দল হিসেবে ১৪৫ (আসলে ১৪৪) রান করেছি এবং সেটা আটকাতে পেরেছি। তার মানে ওই পিচের জন্য এটা যথেষ্ট ছিল। এখানে হয়তো ১৮০ করতে হবে। পুরো দল মিলে আমরা কীভাবে ১৮০-১৯০ করতে পারি কিংবা এমনও হতে পারে ১৩০ রানের পিচও হতে পারে। সেটা আমরা যেন করতে পারি। তা ওপেনার, মিডল অর্ডার নাকি লোয়ার অর্ডার করল… ১১ জনের যে কেউ করতে পারে এবং আমি সেটাতেই খুশি থাকব।’
তবে এই মাঠ আবার বেশ বড়, তাই ক্রিকেটারদের জন্য ওভার বাউন্ডারি অর্থাৎ ছক্কা হাঁকানো হবে বেশ কঠিন। বাংলাদেশের ব্যাটাররা পাওয়ার হিটিংয়ে পারঙ্গম না হওয়াতে সমস্যায় পড়া লাগতে পারে। বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য মিড উইকেট দিয়ে ৭৮ মিটার, স্কয়ার লেগ ৬৪ মিটার, লং অন ৭৪ মিটার। সাধারণত পেসবান্ধব হলেও এখন স্পোর্টিং উইকেট থাকবে বিশ্বকাপ হওয়ার কারণে।
এ বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার মনে হয় বিশ্বকাপ হওয়াতে এখানে স্পোর্টিং উইকেট থাকবে এবং স্পিনাররাও সুবিধা পাবে।’ আর সে কারণেই বুধবারের অনুশীলনে মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদকে দীর্ঘক্ষণ অনুশীলনে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। আজ একাদশে এক ব্যাটার কমিয়ে তাদের একজন ঠাঁই করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে টানা ব্যর্থ ইয়াসির রাব্বি ছিটকে যেতে পারেন। আর পেস আক্রমণে আগের মতোই তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমানই থাকছেন।
তবে কন্ডিশন, উইকেট পরিস্থিতি ও প্রতিপক্ষ বিবেচনায় যে কোন ধরনের হতে পারে একাদশ এমনটাই জানিয়েছেন সাকিব। এই ম্যাচে অনেকটাই নির্ভার হয়ে ফুরফুরে মেজাজে নামবে বাংলাদেশ। আর প্রোটিয়াদের থাকবে জেতার চাপ। কারণ বৃষ্টির দাপটে প্রথম ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়েছে তারা। সাকিবও তাই বলেছেন, ‘তারা চাপের মধ্যে থাকবে। কারণ প্রথম ম্যাচে পুরো ২ পয়েন্ট পেতে চেয়েছে, পায়নি।’
এই জয়ের ক্ষুধাটা বাংলাদেশের চেয়ে প্রোটিয়াদের বেশি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আর বাংলাদেশকে হারাতে তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী আগের ৭ মোকাবিলায় সহজেই জয় তুলে নেওয়ার কারণে। তাই দলের অন্যতম পেসার লুঙ্গি এনগিডি বলেছেন, ‘ওরা যদি এভাবে ভেবেই থাকে যে আমরা জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত, তাহলে সেটা অবশ্যই সত্যি।
আমরা ভালো করেই জানি এই মুহূর্তে কী রকম চাপ কাজ করছে। তবে যদি এটা বলা হয় যে শুধু আমরাই চাপে; তাহলে বলতে হবে বিশ্বকাপ জিততে গেলে এই চাপ ওদের জন্যও সমান। এ ছাড়া তাদের রানও আমরা বেশি বড় করতে দেব না। আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, এখান থেকে আমাদের সব ম্যাচই জিততে হবে। এটাই হচ্ছে সাধারণ হিসাব।’ অর্থাৎ জেতার জন্য পেস এবং স্পিন উভয় আক্রমণে ব্যালান্সড দল হিসেবেই বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে তারা।
বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই পেসার কাগিসো রাবাদা, এনগিডি ছাড়াও এনরিখ নরকিয়া, ওয়েইন পারনেল আছেন। আর স্পিনে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুজন তাবরেজ শামসি ও কেশব মহারাজ বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন। সবমিলিয়ে প্রথমবার সিডনিতে দারুণ উত্তাপের ম্যাচেই নামবে সাকিবরা।