হবিগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি ॥ আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও তার ভাই যুদ্ধাপরাধী

17

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক ভূঁইয়ার যুদ্ধাপরাধের তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
এ সময় তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হয়েও অত্যন্ত সুকৌশলে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির দলের বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন নূরুল হক ভূইয়া ও তার ভাই মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া। একাধিকবার মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভরাডুবি উপহার দিয়েছেন। শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধী হওয়ার কারণে তাকে মানুষ গ্রহণ করেননি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে কথা বলার সাহস কারও নেই। কেউ কথা বললেই তাকে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা দিয়ে ঘায়েল করা হয়। এখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের এ অপকর্ম নিয়ে কথা বলায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলা মোকদ্দমা ঠুকে দিয়েছেন অভিযুক্ত দুই ভাই। মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের অপকর্মের বিষয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা এসব ঘটনার তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান খান বাচ্চু বলেন, একাত্তরে হত্যা, লুন্ঠন, ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে গত ২৩ আগষ্ট ঢাকার ট্রাইব্যুনালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূঁইয়া, আলী রেজা ও সিদ্দিক মিয়া বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অভিযোগ দায়ের মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর থেকেই নিজেকে বাচাতে মিসবাহ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে আসছেন।
তিনি বলেন- ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আজমিরীগঞ্জে লঞ্চ যোগে প্রচারণায় এসেছিলেন সে সময় মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার ভাই নূরুল হক ভূঁইয়া আজমিরীগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর লঞ্চ ঘাটে ভিড়াতে বাধা প্রদান করে। পরে বঙ্গবন্ধু লঞ্চ থেকে ভাষন প্রদান করেন এবং জনতা ও নৌকা মাঝি মরম আলী তার ছেলের সহযোগিতায় মাজার জিয়ারত করে আজমিরীগঞ্জ ত্যাগ করেন। লঞ্চে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গী ছিলেন। যাহা এলাকার প্রবীণগণ অবগত রয়েছেন।
এছাড়াও ৭১ এ পাকহানাদার বাহিনীকে চলাচলের জন্য তারা লঞ্চ দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা, লুটপাট, চোরা চালানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। চিনি চোরা চালান মামলার নং-১৬/৮৭ ইং। তারা অর্থের বিনিময়ে ৩০ বছর মামলার ফাইল গায়েব করে রেখেছিল। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন-১৯৭১ সালে নূরুল হক ভূঁইয়া গং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া গংদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উপস্থান করেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-দিশেহারা মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ভারসাম্যহীন হয়ে একেক সময়ে একেক ধরণের বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ভুল বুঝিয়ে মামলা চলাকালীন অবস্থায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বলেছি- ১৯৭১ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামী নূরুল হক ভূঁইয়া, তার ভাই মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, আলী রেজা, সিদ্দিক আলী বিথঙ্গল গ্রামের আদম আলী, ওয়াহাব মিয়া, লক্ষন সরকার, আরাদন সরকার ও প্রমোদ রায় এই পাঁচজনকে গুলি করে খুন করেছে, লুটতরাজ করেছে, অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মলেনে ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেছেন তিনি এবং তার ভাই নুরুল হক ভূঁইয়া ঐ সময় বিথঙ্গল গ্রামে বৈধ বন্দুক নিয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং এলোপাতারি আক্রমনে ৬/৭ জন লোক মারা গেছে। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।