স্পোর্টস ডেস্ক :
নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে বড় সংগ্রহ গড়তে দিলেন না অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। কিন্তু জবাব দিতে নেমে লঙ্কান বোলারদের তোপের মুখে রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন অজি ব্যাটাররাও।
এমনকি দলে এত বিধ্বংসী ব্যাটার থাকা সত্ত্বেও তারা পাওয়ার প্লেতে কোনো বাউন্ডারিই হাঁকাতে পারেনি। অবশ্য শেষদিকে মার্কাস স্টইনিসের ঝড়ে সহজ জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে গতকাল পার্থে ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। শুরুতে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৫৭ রান সংগ্রহ করে লঙ্কানরা। জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে ২১ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে ফিঞ্চবাহিনী।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে রানের গতি ঠিক রাখতে পারছিল না অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (১১) যখন বিদায় নিলেন, দলীয় সংগ্রহ তখন মাত্র ২৬। এরপর মিচেল মার্শকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। কিন্তু তাদের জুটিতেও খুব ধীরগতিতে রান আসছিল। প্রথম ৬ ওভার তথা পাওয়ার প্লেতে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার ব্যাটাররা কোনো বাউন্ডারিও হাঁকাতে পারেননি। অবশ্য লেগ বাই থেকে দুটি বাউন্ডারি উপহার পেয়েছে তারা।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরও অস্ট্রেলিয়া অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল। নবম ওভারে আবার বিদায় নেন মার্শ। তিনে নেমে ১৭ বলে ১৭ রান করেন তিনি। এরপর ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েও ফেরেন গ্লেন মাক্সওয়েল। মাত্র ১২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৩ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তখনও জয় থেকে অনেকটা দূরে অস্ট্রেলিয়া। ফিঞ্চ অন্যপ্রান্তে কোনোমতে উইকেট বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। ১৩তম ওভারে একবার জীবনও পান এই অজি ওপেনার। তবে ক্রিজে নেমে সব দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নেন স্টইনিস।
১৩তম ওভারে মুখোমুখি হওয়া প্রথম দুই বল থেকে ৩ রান নেওয়া স্টইনিস ওভারের শেষ বলে হাঁকান বাউন্ডারি। তাতে শেষ ৪২ বলে অজিদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬১ রান। পরের ওভারে ফের দুই বাউন্ডারি আসে স্টইনিসের ব্যাট থেকে। ১৫তম ওভারে দেখা মেলে স্টইনিস-ঝড়ের। হাসারাঙ্গার ওই ওভারে ২ ছক্কা ও এক বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। ওভারে আসে ১৯ রান। ৩০ বলে তখন ৩২ রান চাই অস্ট্রেলিয়ার। অর্থাৎ ম্যাচ পুরোপুরি হাতের মুঠোয় চলে আসে তাদের।
পরের ওভারে থিকসানার ওপর চড়াও হন স্টইনিস। তার তিন ছক্কাসহ ওই ওভারে আসে ২০ রান। ১৭ বলে তুলে নেন ফিফটি, যা আবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। ফলে শেষ ২৪ বলে ১২ রানে আসে লক্ষ্য।
১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আবার ছক্কা হাঁকান স্টইনিস। তৃতীয় বলে ওয়াইড বলে স্টইনিস সিঙ্গেল নিলে স্ট্রাইকিং প্রান্তে গিয়ে ডাবল নেন ফিঞ্চ। ফলে ৩ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৮ বলে ৪ চার ও ৬ ছক্কায় ৫৯ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন স্টইনিস। ফিঞ্চ অপরাজিত থাকেন ৪২ বলে ১ ছক্কায় ৩১ রান নিয়ে।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। এরপর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তারা লঙ্কান ওপেনারদের চাপে ফেলে দেয়। সেই চাপে দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন কুশল। ৬ বলে ৫ রান করে এই উইকেটকিপার-ব্যাটার অজি পেসার প্যাট কামিন্সের বলে মিচেল মার্শের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
প্রথম উইকেট হারানোর পর লঙ্কানদের রান তোলার গতি কমে যায়। তবে তারা উইকেট ধরে রাখে। এর সুফলও পায় তারা। পাথুম নিশাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৬৯ রান। ধনঞ্জয়া ২৩ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন। এরপর ২২ রান যোগ হতেই রান আউট হয়ে ফেরেন ওপেনার নিশাঙ্কা। একপ্রান্ত ধরে রাখায় মনোযোগ দেওয়ায় ওয়ানডে গতিতে ৪৫ বলে ৪০ রান করেন তিনি।
লঙ্কানদের চতুর্থ ধাক্কা দেন মিচেল স্টার্ক। অজি ফাস্ট বোলারের বলে কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভানুকা রাজাপক্ষে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারা শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক দাসুন শানাকা অজি উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েডের হাতে ক্যাচ ফেরেন ৩ রান করে। এরপর ১৮তম ওভারে দলীয় ১২০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে আউট হম ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (১)। বিপর্যয়ের মধ্যেও হাল ধরে রাখেন চারিথ আসালাংকা। শেষ ওভারে তার ও করুণারত্নের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। পর্যন্ত ২৫ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন আসালাংকা। চামিকা করুণারত্নে ৭ বলে ১৪ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন।