কোনো কোনো বছর সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি ও বন্যার রেকর্ড আছে। কিন্তু অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ব্যাপক পানি বৃদ্ধি, নদীভাঙন ও ফসলের মাঠ তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা আগে কখনো দেখেননি বলে জানিয়েছেন যমুনা ও পদ্মাপারের অনেক মানুষ। অক্টোবরের মাঝামাঝি উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে যমুনায় দ্রুত পানি বাড়তে থাকে। এতে কুড়িগ্রাম থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ নিচু এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নদীভাঙনে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
গত কয়েক দিনে যমুনা ও পদ্মায় এবং এগুলোর সঙ্গে যুক্ত নদীগুলোতে সপ্তাহখানেক আগে থেকে পানি বেড়ে চলেছে। গত মাসেও এসব নদীতে পানি বেড়ে গিয়েছিল। তখন ইছামতী নদীর ভাঙনে মানিকগঞ্জের ঘিওরে ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাটের একাংশ ভেঙে গিয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল শতাধিক ঘরবাড়ি এবং একটি সেতুসহ কিছু পাকা সড়ক। তখন বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকমে ভাঙন ঠেকানো হয়েছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ইছামতী, পুরনো ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীতে পানি বেড়ে গিয়ে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়কসহ বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বেতিল স্পার বাঁধ-১-এর ১২০ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই ও ঝিনাই নদীতেও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েকটি গ্রামের অর্ধশত ঘরবাড়ি ও কয়েক শ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। এ ছাড়া উপজেলা সদরের সঙ্গে উত্তর মির্জাপুরের যোগাযোগ রক্ষাকারী কুরনী-ফতেপুর রাস্তাটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে অসময়ে পদ্মা নদীর পানি ও স্রোত বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এদিকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে স্বাভাবিক ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে উজানের পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্ণখালীর নদ-নদীর পানি বেড়েছে। আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ১০ গ্রামের ফসল। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। এমন খবরাখবর আসছে যমুনা অববাহিকার আরো অনেক এলাকা থেকেই।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে এমন দুর্যোগ আগেও ছিল, এখনো আছে। কিন্তু নদীগুলোর এত দুরবস্থা আগে ছিল না। নদীর গভীরতা নেই বললেই চলে। এর ফলে বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের গ্রহণ করা ডেল্টা প্ল্যান খুবই কার্যকর পরিকল্পনা। এখন এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছু আশু কর্মসূচিও থাকতে হবে। আমরা আশা করি, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি নদী সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।