দলের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী ॥ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ ॥ তৃণমূল থেকে দল ঢেলে সাজার ঘোষণা ॥ আট বিভাগের জন্য পৃথক কমিটি

115
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় বক্তব্য রাখছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঢেলে সাজা হবে। এ জন্য আমরা আট বিভাগের জন্য আটটি কমিটি করেছি। কমিটিগুলোর দায়িত্ব থাকবে তৃণমূলকে নতুন করে ঢেলে সাজার। আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছে, দলের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ একসঙ্গে বসেছি। সেই সঙ্গে আমরা আর একটি কাজ করতে চাই, ইতোমধ্যে আমাদের সভাপতিম-লীর মিটিং করেছি, ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করেছি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্যদের নিয়ে আটটি বিভাগে পৃথক কমিটি গঠন করেছি। তিনি বলেন, কমিটিগুলোর দায়িত্ব থাকবে আমাদের সংগঠনগুলো একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে নতুন করে ঢেলে সাজানো। কোথায় কমিটি আছে বা না আছে সেগুলো দেখা। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে অনেক সময় ক্ষমতাসীন সরকার ধীরে ধীরে মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যায় বা তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছে, জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে।
বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। এ লক্ষ্যেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছি। আমরা সরকারীভাবেও কমিটি করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। দলের পক্ষেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা একটা কমিটিও করেছি। সেই কমিটির মাধ্যমে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম- আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। এই সময়টাকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই বৈঠকে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচন, যেটা হয়ে গেল; যদি নির্বাচনের দিক তাকান দেখবেন সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যেটা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। তিনি বলেন, এবার সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানায়। এমনকি ব্যবসায়ী সম্প্র্রদায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ছাত্র; সবচেয়ে বড় কথা যারা প্রথমবারের ভোটার, নবীন ভোটার সকলেই আওয়ামী লীগ সরকারকে আবারও চেয়েছে, তাদের সেবা করার জন্য মানুষ ভোট দিয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন জোটের ভরাডুবির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অবস্থান কী? যেহেতু সামরিক স্বৈরাচার ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় গিয়ে এসব দল গঠন করেছে, খুব স্বাভাবিকভাবে এরা হচ্ছে পরজীবীর মতো। নির্বাচনকে তারা মনে করেছে একটা ব্যবসা। মনোনয়নের টিকেট বেচে তারা কিছু পয়সা কামাই করে নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের প্রতি তাদের খুব একটা নজর ছিল না। যার জন্য নির্বাচনে তাদের এই হাল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে যখন সার্ভে করা হয়েছিল, সেই সার্ভেতে তখন থেকে স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগকে জনগণ চায়। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। আর বিএনপি নির্বাচন করেছে মনোনয়ন বাণিজ্য করার জন্য। মনোনয়ন বাণিজ্য করার ওপর তারা গুরুত্ব দিয়েছে। যার জন্য তাদের এই হাল। বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাহোক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এসবই ছিল তাদের কাজ। আজকে দেশের মানুষ অন্তত শান্তি পাচ্ছে।
এবারের নববর্ষ সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদ্যাপন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার ব্যাপকভাবে নববর্ষ উদ্যাপন হয়েছে। শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সকলে এই উৎসবটা পালন করেছে। আমরা কিন্তু নববর্ষ ভাতাও দিচ্ছি। বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
জাতির পিতার অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশটা জাতির পিতার নেতৃত্বে যখন উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে তখনই ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনা ঘটে। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
বক্তব্যের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সেই স্বাধীন রাষ্ট্র, একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশকে গড়ে তুলে দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে যখন জাতির পিতা যাত্রা শুরু করেন, ঠিক সেই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে এবং জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর পর ২৯ টি বছর, প্রথমে ২১ বছর। এরপর আবার ৭ বছর। এই জাতির জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে। এ সময়ে কাক্সিক্ষত কোন অগ্রগতি দেশের মানুষের জীবনে হয়নি।
তিনি বলেন, কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করেছে তখনই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। ’৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতা আসে আওয়ামী লীগ, এর পর ২০০৮ সালে নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করি এবং এ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ আজ ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত হবার পথে। আমরা ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে দারিদ্র্যের হার নামিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণসহ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আজকে গ্রামের মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হচ্ছে, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে। এটাই জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল এবং তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।
দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সঞ্চালনায় সভায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রূদ্ধদ্বার যৌথসভায় সাংগঠনিক কর্মকা- ছাড়াও দলীয়ভাবে কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষ পালনের ব্যাপারে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন পরামর্শ দলের সভাপতির সামনে তুলে ধরেন। তারা বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় মুজিববর্ষ পালনে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করতে হবে। টিমগুলো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নিজ নিজ এলাকায় নানা অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে মুজিববর্ষ পালন করবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিও অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন পরামর্শের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ব্যাপক শোডাউন : এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসার পথে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপক শোডাউন করেছে দলের সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে গুলিস্তানের নূর হোসেন চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। যুবলীগের লাল-সবুজের পতাকা, সবুজ ক্যাপ ও গেঞ্জি পরিহিত হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম, নেত্রী তোমার দুই নয়ন, বাংলাদেশের উন্নয়ন’ ‘শেখ হাসিনা-যুবলীগ, যুবলীগ-শেখ হাসিনা’ স্লোগান দিতে থাকে। এছাড়া পতাকা নেড়ে নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান নেতাকর্মীরা। নূর হোসেন চত্বরে দাঁড়িয়ে এই শোডাউনে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাট। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।