কাজিরবাজার ডেযস্ক :
পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলবর্তী দেশ গিনি বিসাউয়ের প্রধানমন্ত্রী নুনো গোমেস নাবিয়াম নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোচে কান্দে এবং আরও দুই মন্ত্রীও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির আন্তঃমন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস কমিটির কয়েক সদস্যও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কারও মৃত্যু হলো। দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপেও করোনায় প্রথম মৃত্যু হলো কোন মানুষের। পাকিস্তানে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। ভারত লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইরান ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছে। করোনায় মৃতের সংখ্যা সংশোধন করায় ব্রিটেন এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ মারা যাওয়া মানুষের দেশে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে অষ্টম দেশ হিসেবে রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সারাবিশ্বের ২১১ দেশে করোনা ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩২ লাখ ৩৬ হাজার ১৪ জন। মারা গেছেন দুই লাখ ২৮ হাজার ৬১০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১০ লাখ ১০ হাজার ৮০ জন। সম্পদের অপ্রতুলতা ও ব্যবস্থাপনার অদক্ষতার কারণে গিনি বিসাউয়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা ভাল নয়। দেশটিতে এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০৫ জন ও মৃত্যু হয়েছে একজনের। ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আফ্রিকান সেন্টারস ফর ডিজিজ এ্যান্ড প্রিভেনশনের (এসিডিসি) তথ্যানুযায়ী, আফ্রিকা মহাদেশে শনাক্ত হওয়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃত্যু হয়েছে পাঁচ শ’ জনেরও বেশি মানুষের। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে দৈনিক নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও বাড়ছে আফ্রিকায়। মহাদেশটি এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারীটির নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন কিছু বিশেষজ্ঞ। উচ্চমাত্রার সংক্রামক ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে মহাদেশটির অনেক দেশে ও শহরে লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু বেড়ে ৬১৬৬৯ ॥ বিশ্বজুড়ে মহামারী সৃষ্টি করা করোনা সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ৬১ হাজার ৬৬৯ জন ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হওয়া মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭২ জনে। আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশই নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের। শুধু নিউইয়র্কেই মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজার ৩১৭ জনের। এরপর প্রায় ৭ হাজার মৃত্যু নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে নিউজার্সি অঙ্গরাজ্য আর ৩ হাজার ৬৭০ মৃত্যু নিয়ে তৃতীয় স্থান আছে মিশিগান। দেশটিতে শনাক্ত হওয়া নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ৩৮৮ জন আর মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৮ জন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্য, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য অঞ্চলেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। আফ্রিকান-আমেরিকানরাই এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তারাই বেশি মারা যাচ্ছেন।
পাকিস্তানে আরও ৮৭৪ আক্রান্ত ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮৭৪ জন প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একদিনে এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৭৫৯ এবং মারা গেছে ৩৪৬ জন। বর্তমানে দেশটিতে লকডাউন চলছে। করোনার বিস্তাররোধ করতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৯ মে পর্যন্ত লকডাউন চলবে।
সিঙ্গাপুরে আরও ৫২৮ আক্রান্ত ॥ নতুন করে ৫২৮ জনের শরীরে ধরা পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৬৯ জন। নগররাষ্ট্রটিতে অন্তত ৩ লাখ ২৩ হাজার অভিবাসী শ্রমিক বসবাস করেন। ইতোমধ্যেই তাদের প্রায় চার দশমিক এক শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ হাজার ৩৫৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ছয়জন সিঙ্গাপুরিয়ান নাগরিক বা স্থায়ী অধিবাসী। বাকি সবাই বিভিন্ন ডরমিটরিতে বসবাসকারী অভিবাসী শ্রমিক। এর আগে বুধবার ৬৯০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যেও অন্তত ৬৬০ জন ছিলেন ডরমিটরির অধিবাসী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে সম্প্রদায়ভিত্তিক সংক্রমণের হার কমে দাঁড়িয়েছে গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনে। দুই সপ্তাহ আগেও সেখানে দিনে অন্তত ২৫ জন এ ধরনের রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট এক হাজার ১৮৮ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মারা গেছেন ১৪ জন। এছাড়া আরও চারজন করোনা পজেটিভ ব্যক্তি অন্য কারণে প্রাণ হারিয়েছেন।
লকডাউন তুলে নিচ্ছে ভারত : ভারতজুড়ে লকডাউন চলছে। গত ২৫ মার্চ থেকেই লকডাউন জারি রয়েছে। আগামী রবিবার এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। লকডাউন চলাকালীন সব রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। গণপরিবহন চলাচলেও ছিল নিষেধাজ্ঞা। তবে শুধু জরুরী জিনিসপত্র যেমন খাবার ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম বহনকারী পরিবহন নিষেধাজ্ঞার বাইরে ছিল। লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক। তাদের কোন কাজ নেই, এমনকি শহরে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা বাড়িও ফিরে যেতে পারছেন না। ফলে এক অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের। এদিকে বুধবার এক নোটিস জারির মাধ্যমে লকডাউনে আটকে পড়া লোকজনকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া লোকজন নিজেদের রাজ্যে ফিরতে পারবেন। যেসব অভিবাসী শ্রমিকের দেহে করোনার কোন ধরনের উপসর্গ নেই তারা, শিক্ষার্থীরা, তীর্থযাত্রীরা ও পর্যটকরা যার যার রাজ্যে ফিরে যেতে পারবেন। ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬২ এবং মারা গেছেন এক হাজার ৭৯ জন।
ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে ইরান ॥ মহামারী করোনা সঙ্কটের শেষ দেখছে না ইরান। এই অবস্থায় সব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি। বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ওই ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার ৮০ জন মারা গেছেন করোনায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ জন মারা গেছেন। এনিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮ জনে। আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ হাজার ৬৫৭ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৫ হাজার ১০৩ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ৭৩ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণার পর সব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা বলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইরানী প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই ভাইরাসের শেষ কবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই আমরা কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সব ধরনের স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সাবধানতা অবলম্বনে যতটা গুরুত্ব রয়েছে, ঠিক ততটা গুরুত্ব রয়েছে কাজে ফিরে যাওয়ার ও উৎপাদন বাড়ানোর।
রাশিয়ায় আক্রান্ত লাখ ছাড়াল ॥ দেখতে দেখতেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন অন্তত ৭ হাজার ৯৯ জন, যা এখন পর্যন্ত তাদের একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার করোনাভাইরাস ক্রাইসিস রেসপন্স সেন্টার জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ছয় হাজার ৪৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১০১ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৩ জন। ১১ হাজার ৬১৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন এক হাজার ৩৩৩ জন। এদিনই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ৮৫ প্রশাসনিক অঞ্চলেই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত এলাকা রাজধানী মস্কো। দেশটির প্রায় অর্ধেক রোগীই ওই অঞ্চলের।
ব্রিটেনে মৃত্যু বেড়ে ২৬১৬৬ ॥ করোনা মহামারীতে প্রাণহানির সংখ্যায় স্পেন ও ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে গেছে ব্রিটেন। বুধবার দেশটিতে মৃত ব্যক্তিদের সংশোধিত তালিকা প্রকাশের পরপরই বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা। নতুন তালিকায় হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেয়ার হোমসহ অন্যান্য জায়গায় মারা যাওয়া করোনা রোগীদের সংখ্যা যোগ করার পর ব্রিটেনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৬৬ জন।
জার্মানিতে আরও ১৭৩ মৃত্যু ॥ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জার্মানিতে প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর পাল্লা ভারী হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দেশটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, নতুন করে আরও ১ হাজার ৪৭৮ জন প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬১ হাজার ৫৩৯।
স্পেনে আরও ২৬৮ মৃত্যু ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৮ জন মারা গেছেন, যা গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৫৪৩। শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৫। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৫১৮ জন।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ॥ বিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৩১ জন। বৃহস্পতিবার দিনের প্রথমভাগে নতুন করে ৫৮০ জন মারা গেছেন। ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ৩২৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ হাজার ৭৭৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নতুন করে বেলজিয়ামে মারা গেছেন ৯৩, মেক্সিকোয় ১৬৩ জন।