টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষা করুন

12

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। একে নিয়ে আমাদের গর্বিত হওয়ার কথা। বিশ্বপরিসরে আরো বেশি করে এর পরিচিতি তুলে ধরা দরকার। এর সৌন্দর্য ও সঠিক পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া দরকার, কিন্তু আমরা তার প্রায় কিছুই করছি না, বরং এর যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল, সেই সবই আমরা ক্রমাগতভাবে ধ্বংস করে চলেছি।
জানা যায়, হাওর এতটাই অরক্ষিত যে আশপাশের গ্রামের লোকজন দা-কুড়াল-করাত নিয়ে এসে হাওরে থাকা হিজল ও করচ বাগানের গাছ দিনদুপুরে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। খবরের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, করাত দিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়া গাছের গোড়াগুলো পড়ে আছে। অভিযোগ আছে, আশপাশের জলমহালগুলোর ইজারদারের লোকজনও এসব গাছ কেটে নিয়ে ডালপালা তাদের জলমহালে ‘কাঁটা’ বা ‘ছাঁটা’ হিসেবে ব্যবহার করে। এতে জলমহালে মাছের পরিমাণ বাড়ে।
জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০০০ সালে জলাভূমিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রামসর কনভেনশনের আওতায় এই হাওরটিকে ‘রামসর সাইট’ ঘোষণা করে। এর পর থেকেই এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃত অংশ। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই হাওরটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পাশাপাশি ধর্মপাশা উপজেলায়ও বিস্তৃত। হাওরটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এর প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। দেশীয় পাখির পাশাপাশি শীতে পরিযায়ী পাখির ব্যাপক সমাগম ঘটে। হিজল, করচ ছাড়াও এখানে গুলি, বালুয়া, বনতুলসীসহ আরো অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে। এগুলোতে পাখিরা আশ্রয় নেয়। স্থানীয় পাখিরা বাসাও করে। এভাবে গাছ কাটা হলে এখানকার প্রতিবেশ বা বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। পাখির আবাসযোগ্যতা ধ্বংস হবে। রামসর সাইট তার গুরুত্ব হারাবে।
শুধু গাছ কাটা নয়, আরো অনেকভাবেই ধ্বংস করা হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ। পর্যটনের নামেও এখানে চলে নানা রকম অত্যাচার। ঘুরতে আসা নৌকাগুলোতে লাউডস্পিকার লাগিয়ে এত জোরে গান বাজানো হয় যে পাখিরা ভয়ে পালায়। যারা ঘুরতে আসে তারা অবশিষ্ট খাবার, খাবারের প্যাকেট, পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতলসহ বহু রকম আবর্জনা ফেলে এর জলীয় পরিবেশ দূষণ করে। অভিযোগ আছে, হাওরে পাহারারত আনসারদের যোগসাজশে এখান থেকে প্রচুর মাছও ধরা হয়।
টাঙ্গুয়ার হাওর আমাদের গর্ব। সব বৈশিষ্ট্যসহ একে রক্ষা করতে হবে। গাছ কাটাসহ সব ধ্বংসাত্মক কাজ বন্ধ করতে হবে। আর এর সংরক্ষণের কাজে স্থানীয় লোকজনকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।