এ এইচ ফারুক আহমদ খান :
দৃষ্টি সবার অধিকার। আর চোখ আমাদের দৃষ্টি শক্তি প্রদান করে। চোখ মানবদেহের অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ বা ইন্দ্রিয়। মানুষের জীবদ্দশায় প্রায় সকলেরই চক্ষু স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন রয়েছে। অথচ বিভিন্ন কারণে বেশিরভাগ মানুষ চক্ষু সেবা নিতে পারে না। চক্ষু সেবা গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি ও চক্ষুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে শতকরা ৮০ ভাগ অন্ধত্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
১৩ অক্টোবর বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব নিরসনের জন্য সচেতনতা তৈরী ও চোখের প্রতি সকলকে যত্নশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র, সরকারি ও বেসরকারিভাবে দিবসটি পালন করে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব দৃষ্টি দিবস পালিত হয়। চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১৩ অক্টোবর “লাভ ইওর আই’জ” বা “ভালোবাসুন আপনাদের চক্ষুগুলোকে” শ্লোগান নিয়ে বিশ্ব দৃষ্টি দিবস ২০২২ পালিত হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউট, চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় কর্মরত বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিও ও চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো সারা দেশে যথাযথ উদ্দিপনায় দিবসটি পালন করছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সকল শ্রেণির মানুষের জন্য নিবিড় চক্ষু স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়। দিবসটিকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যালি ও সমাবেশসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। তাছাড়া আই ক্যাম্প করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চক্ষুসেবা প্রদান করে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও সংস্থা।
বিশ্বে প্রতি মিনিটে চারজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ ও প্রতি মিনিটে ১ জন শিশু দৃষ্টি হারাচ্ছে বা অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ও চক্ষু স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা মতে দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অন্ধত্বের হার অনেক বেশি। বিশ্বে দুই কোটিরও অধিক জনসংখ্যা দৃষ্টিহীন। ১ কোটিরও অধিক জনসংখ্যা ছানি জনিত অন্ধত্ব নিয়ে ভুগছেন যা নিরাময় যোগ্য।
বাংলাদেশের অন্ধত্ব পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। জনবহুল এ দেশে মাত্র ১২০০ জন চক্ষু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তাদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছানি অপারেশন করেন না।
তাছাড়া বেশীর ভাগ চক্ষু স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিভাগীয় বা জেলা শহরে অবস্থিত। গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ সেবা থেকে বঞ্চিত। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে নারী শিশু ও বৃদ্ধরা তুলনামূলকভাবে চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা পায় না। প্রতি ১০০ জন ত্রিশোর্ধ্ব জনগণের মধ্যে ১ জন ক্ষীন দৃষ্টি বা অন্ধত্ব নিয়ে ভুগছে। এরমধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ অন্ধত্ব নিরাময়যোগ্য। চশমাজনিত অন্ধত্ব, ছানি রোগ, গ্লোকমা, ডায়বেটিক, রেটিনোপেথি বাংলাদেশের প্রধান অন্ধত্বজনিত রোগ। তাছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রিক ডিভাইস-এর প্রতি মানুষের আসক্তি ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের কারণেও চক্ষু স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
আমরা প্রত্যেকে যদি নিজের চোখের ব্যাপারে আরও যত্নশীল হই তাহলে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তাছাড়া নিবিড় চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা সকল স্থানে সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। যেহেতু চক্ষু স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ব্যয়বহুল তাই অন্ধত্ব নিরসনে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা যথেষ্ট অবদান রাখতে পারেন। এ পৃথিবীতে একজন মানুষও যদি নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব বরণ করে তাহলে কি এর দায়ভার আমাদের সকলের উপর বর্তাবে না ?
চোখের সমস্যা শুধু স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা নয়, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব নিরসন অপরিহার্য।
লেখক- সমাজকর্মী ও সংগঠক।