যুক্তরাষ্ট্রে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রে লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ১৯৭০’র দশকের পর থেকে দেশটিতে দ্রব্যমূল্য কখনো এত বেশি বাড়েনি। মুদি দোকানে যেসব জিনিসপত্র বিক্রি হয়, সেগুলোর দাম গত এক বছরে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যেই আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে মধ্যবর্তী নির্বাচন। ফলে জিনিসপত্রের দাম কবে কমবে এবং আসন্ন নির্বাচনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
দ্রব্যমূল্য এত বেশি কেন?
যুক্তরাষ্ট্রে এখন এক কার্টন ডিমের দাম তিন ডলারের বেশি (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩১৩ টাকার মতো)। ২০২১ সালের শুরুতে জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন এর দাম ছিল এখনকার চেয়ে অর্ধেক। গরু ও মুরগির মাংসের দামও বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে একগুচ্ছ কলার দাম। জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছিল মূলত করোনাভাইরাস মহামারির সময়। তখন মানুষ রেস্টুরেন্টে খাওয়া কমে দেয়। এতে মুদি দোকানের জিনিসপত্রের চাহিদা বাড়তে থাকে। মহামারির কারণে উৎপাদন ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়।
উৎপাদনের জন্য কোম্পানিগুলোর যে অতিরিক্ত খরচ হয়, সেটি তারা ভোক্তাদের ওপর ঠেলে দিয়েছে। যেমন- তাদের মজুরি বাড়াতে হয়েছিল এবং জ্বালানির দাম আগের তুলনায় বেড়েছে।
এরপর চলতি বছর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সার, গমসহ অন্যান্য শস্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। সাম্প্রতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেও শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আবার, বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ায় ডিমের সরবরাহ কমে গেছে।
দ্রব্যমূল্য কমবে কবে?
মুদি দোকানে জিনিসপত্রের দাম মাঝেমধ্যে কমলেও রেস্টুরেন্টে খাবার দাম কেবল বেড়েই চলেছে। দ্রব্যমূল কমানোর জন্য চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে জোগান বাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে কিছু ভালো খবর অবশ্য আছে। গত কয়েক মাসে বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। জ্বালানি তেলের দামও নিম্নমুখী।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে জিনিসপত্রের দাম খুব শিগগির কমছে না। কোকাকোলা এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলো বলছে, চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকবে।
কী করছেন বাইডেন?
মার্কিনিরা বারবার বলছেন, অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর অসন্তুষ্ট ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে, তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানরা আরও বেশি অসন্তুষ্ট।
টেক্সাসে বসবাসরত ৩৬ বছর বয়সী রোমিশা লোয়ারি বলেন, তিনি (বাইডেন) ভালো কাজ করেননি। ট্রাম্প সমর্থক এ নারীর অভিযোগ, সম্প্রতি খাদ্য, গ্যাস ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার পরিবারকে ফুড প্যান্ট্রিতে গিয়ে সাহায্য চাইতে হয়েছে।
রোমিশা বলেন, গত দুই বছরে আমার মনে হয়েছে, ট্রাম্পের সময় আমরা যতটা গরীব ছিলাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি গরীব হয়ে গেছি।
দাম কমানোর জন্য বাইডেন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। গ্যাসের দাম কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এর পরিমাণ অভূতপূর্ব।
খাদ্যপণ্যের মূল্য কমাতে মাংসের বাজারে প্রতিযোগিতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি, কৃষকরা যেন সার কিনতে পারেন, সেজন্য তাদের সহায়তা বাড়ানো হয়েছে।
তথাকথিত ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট ২০২২’ পাস করেছে ডেমোক্রেটরা। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য এ ধরনের আইন প্রণয়নের মতো পদক্ষেপ হয়তো রাজনৈতিকভাবে ভালো হতে পারে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি মূল্যস্ফীতির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা মূল্যস্ফীতির বিষয়টিকে তাদের বিজয়ের জন্য একটি ইস্যু হিসেবে দেখছে। নেব্রাস্কার রিপাবলিকান প্রতিনিধি একটি বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন। সেখানে দেখানো হচ্ছে, তিনি তার স্ত্রীকে একটি বার্গার দিচ্ছেন। এটি আকারে ছোট হলেও দাম অনেক বেশি।
বর্তমান সরকারের অধীনে দ্রব্যমূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বোঝানোর জন্য তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘বাইডেন বার্গার’।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে মূল্যস্ফীতি কত বড় ইস্যু?
আগামী নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে কংগ্রেস কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং অনেক অঙ্গরাজ্যের নেতৃত্ব ঠিক হবে।
তবে এই নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করে তাদের মূল সমর্থকদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে সাধারণত ক্ষমতাসীন দল আসন হারায়। তবে ডেমোক্রেটরা মনে করছে, তারা যতটা আশঙ্কা করেছিল, নির্বাচনের ফলাফল ততটা খারাপ হবে না। যদিও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের বিপক্ষে।
অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার প্রতিযোগীও কম। আবার, ডেমোক্রেটদের শক্ত ঘাঁটিগুলোতে গর্ভপাত বিতর্কে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি কিছুটা চাপা পড়েছে। গর্ভপাত করার যে সাংবিধানিক অধিকার, সেটি সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেওয়ার পর ফের আলোচনায় উঠে এসেছে।
এছাড়া, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়েও উদ্বেগ আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনীতিতে নামার পর থেকে এটি তৈরি হয়েছে।
রিপাবলিকানদের জন্য অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে, জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া। রিপাবলিকান প্রার্থীরা ইমিগ্রেশনের বিষয়টিকেও সামনে আনছেন।
জনমত জরিপ বিশ্লেষক লি মিরিঙ্গফের মতে, শুধু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে সামনে এনে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষের ধারণা পরিবর্তন হয়। সেজন্য আপনি শুধু একটি ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে প্রচারণা চালাতে পারে না।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নির্ভর করে রাজনৈতিক পক্ষপাতের ওপর।
মিরিঙ্গফ বলেন, অনেক ভোটার এরই মধ্যে মনস্থির করে ফেলেছেন। ফলে বাকি দিনগুলোতে তাদের মনোভাব খুব একটা পরিবর্তন হবে না।