কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ফলে মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সাত ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে দেশের একাংশ। বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেবিদ্যুৎ বিভাগ। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে গ্রিডের কারিগরি ত্রুটিকে বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বুধবার (৫ অক্টোবর) তদন্ত কমিটি নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে যায়। কমিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির কন্ট্রোল রুম ও বিভিন্ন মেশিনারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিকেলে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় গ্রিডের ইস্টার্ণ অঞ্চলে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি ছিলো এবং পশ্চিমাঞ্চলে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিলো। এ সময় পশ্চিমাঞ্চল থেকে ইস্টার্ণ গ্রিডে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিলো। পূর্বাঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়ায় সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায় এবং আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আনস্টেবল হয়ে যায়।
এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ‘ট্রিপ’ করলে আশুগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের ২৩০ কেভির দুটো সার্কিট এবং ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪ ও ৫ নং ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মেরামত শেষে ৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪ নম্বর ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলেও ৫নং ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু করা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রিড বিপর্যয় হলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কোনও ফিজিক্যাল ড্যামেজ পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থাৎ কারিগরী ত্রুটি সিস্টেম ফেইলের মূল কারণ।
বাংলাদেশের গ্রিড সিস্টেম এখনো পরিচালিত হচ্ছে অ্যানালগ পদ্ধতিতে। উন্নত বিশ্বে সঞ্চালন লাইন স্বয়ংক্রিয় পর্যায়ে উন্নত হলেও বাংলাদেশে এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যানালগ পদ্ধতিতে লোড ব্যবস্থাপনা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে জাতীয় গ্রিডকে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনকে গুরুত্ব দিলেও ততোটা গুরুত্ব পায়নি সঞ্চালন লাইন আধুনিকায়ন। ঘাটতি রয়ে গেছে কারিগরি উন্নয়নে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান বলেন, আমাদের গ্রিড সিস্টেমের অনেক অংশ এখনো ম্যানুয়ালি চলছে। গ্রিডের কন্ট্রোলিং সিস্টেমকে আরো ডিজিটালাইজড করা উচিৎ। তবে পুরো গ্রিডকে আধুনিকায়ন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তার পাশাপাশি প্রয়োজন একটি যথোপযুক্ত পরিকল্পনা।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী বলেন, আমরা প্রাথমিক তদন্তে যা পেয়েছি সেটা জানানো হয়েছে। টেকনিকাল ফল্ট ছাড়া তেমন কোনো ফল্ট দেখা যায়নি। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে।