১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে সর্বসাধারণের জন্য ইন্টারনেট চালুর পর থেকে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটিতে পৌঁছেছে। অপরাধীরা এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার, মোবাইল বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে যেসব অপরাধ ঘটিয়ে থাকে তাকে সাধারণত সাইবার অপরাধ বলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হ্যাকাররা মানুষের ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নানা অপকর্ম করছে।
সাইবার অপরাধের মধ্যে আরও রয়েছে তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, প্রতারণা, বø্যাকমেইল, অর্থ চুরি, ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত করে নেটে প্রচার, রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা নেটে প্রচার, মুক্তিযুদ্ধের কর্মকাÐ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ইত্যাদি। এ ছাড়া সামাজিক হয়রানির শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট প্রচার, অন্তরঙ্গ মুহ‚র্তের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, ছবি বিকৃতি করে অপপ্রচার, মানসিক হয়রানি, যৌন হয়রানি, সম্মানহানির জন্য অনলাইনে ও ফোনে হুমকি ইত্যাদি ‘সাইবার বুলিং’ নামে পরিচিত। এই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেক নারী আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পথ বেছে নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে পুলিশ সদর দফতর সময়ের আলোকে জানিয়েছে, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ সেলে ২ হাজার ৬৫৪টি অভিযোগ আসে। যার মধ্যে অভিযোগ বা অপরাধের আটটি ধরন নির্ধারণ করেছে পুলিশ সদর দফতর। এর বাইরেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা, র্যাব ও সিআইডিসহ বিভিন্ন ইউনিটও সাইবার অপরাধ ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নানা অ্যাপসের মাধ্যমে এ ধরনের প্রতারক বা অপরাধী চক্রগুলো বেপরোয়াভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রযুক্তিগত নানা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এক শ্রেণির পেশাদার-অপেশাদার অপরাধী সাইবার দুনিয়ায় ব্যাপকহারে সক্রিয়। ভুয়া আইডি, অন্যের ফোন নম্বর ব্যবহার এবং নকল ছবিসহ নানা কৌশলে তারা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-মেসেঞ্জার ও ‘ইমো’তে এ ধরনের সাইবার অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটছে। সহজ-সরল বা স্বল্পশিক্ষিত নারীরা সাইবার অপরাধীদের শিকার হন বেশি।
এ ছাড়া বর্তমানে প্রায় সবার হাতে স্মার্ট ফোন ও প্রযুক্তির ব্যাপকতায় শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের নানা বয়সি নারীও ভয়ানক আকারে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। যদিও মানসম্মানের ভয়ে অধিকাংশ ঘটনা চাপা দিয়ে রাখেন ভুক্তভোগীরা। আবার অপরাধীদের বø্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে বিপুল টাকা খোয়ানোর পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে অনেকে লাঞ্ছিত হন। কেউ কেউ মানসম্মানের ভয়ে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলেও তথ্য রয়েছে সময়ের আলোর কাছে।
সাইবার অপরাধের কোনো নির্দিষ্ট পরিসীমা নেই। কারণ এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে এক দেশে বসে অপরাধ সংঘটিত করে আরেক দেশের নাগরিকদের ভিকটিম বানানো সম্ভব। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে সাইবার ক্রাইম। কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আইডি হ্যাক করে অপরাধমূলক কর্মকাÐ চালানোর ফলে মামলায় ফেঁসে যেতে পারেন নির্দোষ ব্যক্তিরাও।