স্টাফ রিপোর্টার :
মহাপঞ্চমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা কাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে। সিলেটে এবার ৬০৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সার্বজনীন ৫৫৭টি ও পারিবারিক ৪৯টি পূজার আয়োজন করা হয়েছে। আর প্রতিটি পূজা মন্ডপ কমিটির সেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ডপে মন্ডপে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পঞ্জিকা মতে এবার দেবীর গজে (হাতিতে) আগমন আর নৌকায় গমন। শনিবার ১ অক্টোবর সায়ংকালে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ দুর্গোৎসব। তবে সকল পূজামন্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার্চ্চনা সম্পন্ন করার কথা বলছেন পূজারীরা।
ত্রিনয়নী দশভূজা দেবীর আসার ক্ষণে সনাতন হিন্দু ধর্মের মানুষরা মেতে উঠছেন আনন্দ-উল্লাসে। সবখানেই পূজার প্রস্তুতির আমেজ বেড়ে গেছে শতগুণ। মন্ডপে মন্ডপে দেবী দুর্গার বর্ণিল সাজ-সজ্জার শেষ মুহূর্তের কাজ পুরোদমে চলছে। প্রতিমায় রং-তুলির বর্ণিল আঁচড় দিয়ে শেষ ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে শিল্পীরা অবিরাম কাজ করছেন। এদিকেও পূজা আয়োজনকারী প্রতিটি মন্ডপ কমিটিগুলো ও পারিবারিক পূজা উদ্যোক্তারা এখন সর্বশেষ নান্দনিক সুন্দর আয়োজনের জন্য বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে সিলেট নগরীর বিপণীবিতানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পছন্দের পোশাক ক্রয় করতে সনাতন ধর্মের ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে গেছে। এখন সর্বত্র পড়েছে সাজ সাজ রব।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা সূত্রে জানা গেছে, সার্বজনীন আয়োজনে সিলেটের কোতোয়ালী থানা এলাকায় সার্বজনীন ২৯টি, পারিবারিক ১১টি, জালালাবাদ থানা এলাকায় ১৬টি, পারিবারিক ৪টি, এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। শাহপরান থানা এলাকায় সার্বজনীন ৩৮টি, পারিবারিক ১টি। মোগলাবাজার থানা এলাকায় ১৫টি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১৩টি ও পারিবারিক একটি। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৫৬টি ও পারিবারিক ৩টি। বিশ্বনাথ উপজেলায় সার্বজনীন ২৪টি ও পারিবারিক ২টি। ওসমানীনগর উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ২৬টি ও পারিবারিক ৮টি। বালাগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩০টি ও পারিবারিক ২টি। কানাইঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৩৫টি। জকিগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৯৯টি। বিয়ানীবাজার উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৩৯টি ও পারিবারিক ১৩টি। জৈন্তাপুর উপজেলায় সার্বজননী ২০টি পারিবারিক ২টি। গোয়াইঘাট উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৩৬টি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ২৫টি ও পারিবারিক ১টি এবং ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩৭টি মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মহানগরীর পূজামন্ডপগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় হলো মাছুদীঘিরপারের ত্রিণয়নী, দাঁড়িয়াপাড়ার চৈতালী, সনাতন যুব ফোরাম, লামাবাজার তিন মন্দির, রাজবাড়ী, কাজলশাহ, রামকৃষ্ণ মিশন, বলরাম জিউড় আখড়া, গোপালটিলা, যতরপুর, চালিবন্দর, মাছিমপুর, তোপখানা, গোটাটিকর শিববাড়ি।
দেবী দুর্গার যে মূর্তি সচরাচর দেখা যায়- সেটি সপরিবারে দেবী দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যে দেবী দুর্গা সিংহ বাহিনী ও মহিষাসুর মর্দিনী। দেবীর ডান দিকে উপরে লক্ষ্মী ও নীচে গণেশ। বাঁ দিকে উপরে সরস্বতী ও নীচে কার্তিক। সেই সাথে রয়েছে তাদের বাহন পেঁচা, ইঁদুর, হংস ও ময়ূর। আর দেবীর কাঠামোর উপরে শিবের মূর্তি স্থাপন করা হয়।
এদিকে গত বুধবার দুপুরে নগরীর পুলিশ লাইন্স হল রুমে সনাতন ধর্মালম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২২ উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সমম্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ লুৎফর রহমান, নবাগত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো: সেলিম, গোলাপগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পরিত্রান তালুকদারসহ সিলেট জেলার সকল থানার অফিসার ইনচার্জগণ, সিলেট জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুব্রত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য প্রমুখগণ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা শারদীয় উৎসব সুষ্ঠু সুন্দর ও সফল করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া, সকল পূজা মন্ডপে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য নিজস্ব জেনারেটর ও নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ভলান্টিয়ার রাখার কথা বলেছেন। তিনি আরো জানান, জেলায় পূজার সার্বিক বিষয় মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় মনিটরিং সেল রাখা হবে।