কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনের পরে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সকল দলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি। এমন ঘোষণা দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা এখনও জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি দলটি।
এ অবস্থায় দলটির মহাসচিব বলেছেন, আন্দোলন, নির্বাচন ও নির্বাচনে বিজয়ী হলে পরবর্তীতে সরকার গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত রূপরেখা শিগগিরই জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি এ রূপরেখা প্রকাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলন কীভাবে হবে, নির্বাচনী জোট কীভাবে হবে, আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায় ও নির্বাচনে বিজয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন এবং পরবর্তীতে কীভাবে সরকার পরিচালনা করা হবে, সেই সরকার জনস্বার্থে কী উদ্যোগ নেবে এসবই উল্লেখ থাকবে রূপরেখায়। আর এ নিয়ে বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম কাজ করছে। তারা ২০দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। তাদের পরামর্শও গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রূপরেখা মিডিয়ার মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এনে গণতন্ত্র সুসংহত করতে চায় বিএনপি। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে শিগগিরই জনগণের সামনে রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব পেশ করা হবে। যার খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়ায় ১৯ দফা প্রস্তাব নিয়ে রোডম্যাপ তুলে ধরা হয়েছে। যাতে কোনো দল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে না পারে, তার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই রোডম্যাপে। দলের নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন জানিয়েছেন, এই সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে জনমতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করাসহ এর ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহারও দেওয়া হবে।
সংস্কার প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে-ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন এবং সংবিধান সংশোধন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংবিধান সংস্কার কমিশন, ইসি নিয়োগে আইন সংশোধন, বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে জুডিশিয়াল কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন, ন্যায়পাল নিয়োগ, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন ইত্যাদি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন। জনগণের ভোটাধিকারের দাবি আদায়ে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে অনেকগুলো দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। সংলাপে সব দলই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া ও যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচনোত্তর রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা প্রকাশ করবেন তারা। এরপর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।
দলটির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যে জিনিসগুলোকে আওয়ামী লীগের দাবির মুখে বিএনপির পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছিল, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী এবং আরও পরিচ্ছন্ন আকারে উপস্থাপন করা হবে। দ্বিতীয়ত হলো দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০৩০ ভিশনের মাধ্যমে যে ভিশনটি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন সেখানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ আরও কিছু আধুনিক পদ্ধতির কথা বলা আছে। সেই জিনিসগুলো সন্নিবেশিত থাকবে। যেহেতু এটা পরিপূর্ণভাবে আসতে একটু সময় লাগছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছেন, সেই বন্ধুদের এবং দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রপ্রিয় বিশিষ্টজনদেরও মতামত নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং কিছু পরিবর্তন পরিবর্ধনের পরে সাংবাদিকদের সামনে যথাসময়ে এটা পেশ করা হবে।