স্পোর্টস ডেস্ক :
হিমালয়ের দেশটিতে খেলতে গিয়ে স্বাগতিকদের হারিয়ে শিরোপা জেতা যে এতটা সহজ নয়- সে কথা বলা মাত্র মানতে বাধ্য হবে সবাই। এবার সেই অসাধ্যই সাধন করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দশরথ রঙ্গশালায় ফাইনালের মঞ্চে নেপালের বিপক্ষে দাপুটে ফুটবল খেলে বীরের বেশেই জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্বকারীরা। ৩-১ গোলের দুর্দান্ত জয় নিয়ে এই প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এই আনন্দে ভাসছে সবাই। সাবিনারা শুধু শিরোপাই জেতেনি, জয় করেছে গোটা দেশ।
ফুটবল মাঠে সাবিনা-সানজিদারা যেন সত্যিকারের বাঘিনী। আর যারা এই বাঘিনীদের স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে ছিলেন, এই শিরোপা তাদের। যারা বাঘিনীদের স্বপ্নসারথি হয়ে ছিলেন, এই শিরোপা তাদের। যেসকল মানুষ লাল-সবুজের প্রতিনিধত্বকারীদের নিরঙ্কুশ সমর্থন যুগিয়েছেন, প্রতিদান হিসেবে তাদের এই শিরোপা উপহার দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার নতুন রানিরা।
রানিরা দেশে ফিরেছে গতকাল। তাদের বরণ করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। সাবিনারা বাংলাদেশের মানুষকে উপহার দিয়েছেন দীর্ঘদিনের এক কাঙ্খিত শিরোপা।
সাবিনারা এখন রোল মডেল। বিমানবন্দরে চ্যাম্পিয়নদের অভ্যর্থনা জানাতে এসে খেলাকে আরও গুরুত্ব সহকারে নেয়ার শপথ করেছেন অনেক তরুণী। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে যা এখন দেশের বিভিন্ন অংশে জড়িয়ে গেছে। বিমানবন্দরে বিকেএসপির ছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা বিথী বলেন, ‘আমাদের বড় বোনেরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা বিকেএসপির পক্ষ থেকে তাদের স্বাগত জানাতে এসেছি। ফুটবল, আর্চারি, জুডো, অ্যাথলেটিক্সের খেলোয়াড়রা এখানে আছে। তাদের জয় অবশ্যই আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।’
কেমন ছিল পারফরম্যান্স?
নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়েছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তান নারী দলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৬-০ গোল ব্যবধানে। আর পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে উঠে সেমিফাইনালে। চারের লড়াইয়ে আরও ক্ষিপ্রগতির ফুটবল খেলেন সাবিনারা। যেখানে ভুটানের বিপক্ষে জয় এসেছে ৮-০ গোলে। ফাইনালে হিমালয়ের দেশটির মেয়েদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা নিজেদের করে নেন ছোটন রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা বাংলাদেশি দলনেতা সাবিনা খাতুন। পুরো টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৮টি গোল করেন। এর মধ্যে রয়েছে দুটি হ্যাটট্রিক। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করেন সাবিনা। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তুলে নেন প্রথম হ্যাটট্রিক। সেমিফাইনালে ফের জ্বলে উঠেন সাবিনা। পেয়ে যান দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। আর পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি গোলকিপার রুপনা চাকমা পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র একটি গোল হজম করেন তিনি।
সাফ জয়ীদের বীরোচিত সংবর্ধনা
বাঘিনীদের সংবর্ধনা দিতে আগে থেকেই বিমানবন্দরে অধীরে আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল সর্বস্তরের মানুষ। বিমানবন্দরে ঢল নামে সাধারণ মানুষের। অতঃপর শিরোপা নিয়ে গতকাল দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সাবিনাদের বহনকারী বিমান। এরপর বিমানবন্দরে দেওয়া হয় বর্ণিল সংবর্ধনা। এসময় বাফুফে কর্মকর্তারা তাদের মিষ্টিমুখ করান। গোটা দলকে কেক খাইয়ে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। সেখানে দলনেতা সাবিনা বলেন, ‘এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। এর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। একটি জয় নিয়ে দেশে ফিরছি। দারুণ উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে দেশবাসী। আমরাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। ’
এদিকে আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা হয় ছোদ খোলা বাস। বিমানবন্দর থেকে মেয়েদের বহনকারী বাসটি কাকলী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মৌচাক, কাকরাইল, আরামবাগ, মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে যায় বাফুফে ভবনে। সেখানে মেয়েদের বরণ করে নেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
সাবিনাদের জন্য পুরস্কার
দীর্ঘদিনের অধরা শিরোপা দেশবাসীকে এনে দিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। তাই চারদিক থেকে যেমন প্রশংসার বন্যা বইছে, তেমনি পুরস্কারের ঘোষণাও আসতে শুরু করেছে। ইতিহাস গড়া সাফের ট্রফি জেতায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য অর্ধকোটি বা ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বাঘিনীদের জন্য এই প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করল।
শুধু কি তাই? বাফুফের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। অবশ্য তাদের কাছে এই জয়টা অনেক বড় পাওয়া। কেননা, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা বাংলাদেশ নারী দলের ১৪ ফুটবলারের মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের।