কাজিরবাজার ডেস্ক :
মিয়ানমারের বেপরোয়া আচরণে অশান্ত সীমান্ত। সীমান্তে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ এবং আকাশ সীমা লঙ্ঘন বন্ধই হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আরও সতর্কতা অবলম্বন করেছে। টেকনাফ সীমান্তে কোস্টগার্ড ও ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ওপারে অতিরিক্ত বিজিপি সদস্য মোতায়েন করেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানান, মিয়ানমারের সরকারী বাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় তুমব্রু সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের তালিকা তৈরি করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে নিরাপদে রাখার জন্য ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওপারে স্থাপিত রোহিঙ্গা বস্তির নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমারের বিমান থেকে নিক্ষেপ করা মর্টার শেল বিস্ফোরণের দৃশ্য চোখে না দেখলে সহজে বিশ্বাস করবে না কেউ। বিকট শব্দের এই মর্টার শেল কোনারপাড়া ক্যাম্পের পাশে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। ভাগ্যক্রমে এক পাশে পড়েছিল। বস্তির ওপর পড়লে শত শত রোহিঙ্গা মারা যেত। রবিবার ওই মর্টার শেলের অংশ বিশেষ উদ্ধার করেছে রোহিঙ্গারা। তিনি আরও বলেন, শনিবার রাত থেকে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত বিজিপি মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সরকার। তারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে। মিয়ানমারের একগুয়ে মনোভাব ও প্রতিদিন গোলাগুলির কারণে আতঙ্কিত ৩০টি পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে অন্যত্র সরে গেছে। অব্যাহত গোলাগুলি বন্ধ হচ্ছে না এবং আকাশ সীমা লঙ্ঘন ও বাংলাদেশে ফের মর্টার শেল নিক্ষেপের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিজিবি ৪টি চিঠি হস্তান্তর করেছে বিজিপির হাতে। রবিবার সকালে ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির সুবেদার ঢেকিবনিয়া নো-ম্যান্সল্যান্ডে গিয়ে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড (পুলিশ) বিজিপির হাতে এই চিঠিগুলো হস্তান্তর করেন।
জানা যায়, রবিবার ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওপারে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। মেদাই ক্যাম্পের অদূরে ৮ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি চলছিল। মিয়ানমারের উত্তর মংডুর মেদাই ক্যাম্পটি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি দেশটির সেনা সদস্যরা। ৬ দিন আগে মেদাই সেনা ক্যাম্পটি আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত এ ধরনের ১১টি পুলিশ-সেনা ঘাঁটি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এসব ক্যাম্প পুনরুদ্ধারে প্রতিদিন ব্যাপক গুলিবর্ষণ করছে সেনা সদস্যরা। তবে মিয়ানমার বিদ্রোহীরাও পিছু হটছে না। তারাও সেনাবাহিনীর গুলির জবাবে ভারি অস্ত্রের পাল্টা গুলি ছুড়ছে। ঘুমধুম ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আলম জানিয়েছেন, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে সীমান্ত এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৩০টি পরিবারকে। তারা বর্তমানে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ওপারে রাতদিন গোলা-বোমার আওয়াজে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারীদের নির্ঘুম রাত কাটছে। সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উখিয়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষে কয়েকবার বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে গোলা পড়েছে। সীমান্ত ঘেষা রোহিঙ্গা বস্তির মোঃ ইকবাল নামে এক যুবক নিহত ও ৫ জন আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্তের দু’পারে। সূত্র মতে, শুক্রবার রাতে যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে শিশু আহত সাদিয়া মারা গেছে। এর আগে মোঃ ইকবাল নামে ১৭ বছরের এক কিশোর মারা যায়। ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার দিল মোহাম্মদ ভুট্টো জানান, মিয়ানমারে গুলির শব্দে এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে আছে। স্থানীয়রা জমিতে কৃষিসহ কোন কাজই করতে পারছে না।