২০১৬ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে এবং মূলত কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এর ফলে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
তাদের নিজেদের মধ্যেও হানাহানি, খুনাখুনির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে রেখে অন্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নেরও চেষ্টা করছে কোনো কোনো শক্তি, যা হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার পরও কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমার প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজই করছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মিয়ানমারের ওপর জোরালো কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না।
ঠিক এই অবস্থায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গোলাগুলি চলছে। পাহাড়-জঙ্গলে আরাকান আর্মির আস্তানা ধ্বংস করতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর জেট ফাইটার ও হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হচ্ছে বোমা ও মর্টার শেল। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের মধ্যে গোলা এসে বাংলাদেশ সীমান্তেও পড়েছে। সংঘাতের মধ্যে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারের গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে। বেশ কয়েকবার মিয়ানমারের যুদ্ধবিমানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটে। সীমান্তের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও কোনাপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পের ভেতর গোলা পড়ে বিস্ফোরিত হয়ে কয়েকজন হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপ ও হতাহতের ঘটনায় মিয়ানমারকে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনে জাতিসংঘে অভিযোগ করা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না। শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারকে সবার আগে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে। আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রশমনে একমাত্র ব্যবস্থা হতে পারে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং নানা উপায়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।