স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের বিয়ানীবাজারে যুবক হত্যা মামলায় এক আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও অপর ৩ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে আরো বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এ রায় ঘোষনা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলাম।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- মো: জাকারিয়া রুবেল (২৮)। সে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার দরাপপুর গ্রামের আবু তাহেরের পুত্র। বর্তমানে সে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। এবং খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন, লক্ষিপুর জেলার রায়পুর থানার দেনতপুর গ্রামের মো: রুহুল আমিনের পুত্র বর্তমানে জকিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রুবেল (২২), একই জেলার রামগতি থানার সেবাগ্রামের কবিরুল হকের পুত্র বর্তমানে একই এলাকার বাসিন্দা মো: কামরুল হক উরফে হাসান (২১) ও কানাইঘাট থানার সরাইগ্রামের মজিবুর রহমান চৌধুরীর পুত্র আতিকুর রহমান লাভলু (২৮)। রায় ঘোষনার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকারিয়া রুবেল আদালতের কাঠগড়ায় অনুউপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার থানার খাসাড়ীপাড়ার মৃত মো: জমাদ আলীর পুত্র মো: মইনুল হক (৪০) ও পাশ্ববর্তী ছোটদেশ গ্রামের ছানু মিয়ার পুত্র সাহেদ আহমদ (২৩)সহ ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল বিকেল ৫ টার দিকে বাড়ী হতে একটি মোটর সাইকেল যোগে জকিগঞ্জ এলাকা হতে প্রবাসে থাকা তার ভাইর পাঠানো ৩ লক্ষ টাকা আনার জন যান। টাকা নিয়ে তারা উভয়ে আবার মোটর সাইকেল যোগে বাড়ী ফেরার পথে (সিলেট-চ-১১-০১৫৬) নং একটি মাইক্রোবাস গাড়ীটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাদের ধাওয়া করতে থাকে। মোটর সাইকেলটি বিয়ানীবাজারের চারখাই জকিগঞ্জ সড়কের কাটলি ব্রীজের ১০০ গজ পূর্বে পৌছামাত্র ছিনতাইকারীদের মাক্রোবাসটি তাদের মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দিলে তারা মাটিতে ছিটকে পড়ে। এসময় মো: মইনুল হক ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে এবং সাহেদ আহমদ গুরুতর আহত হন। তখন ছিনতাইকারীরা লোকজন আসার ভয়ে মইনুলের পকেটে থাকা ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে না নিয়েই তারা তাদের মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক আহত সাহেদ আহমদ মোবাইল ফোনে পুলিশ ও নিহতের পরিবারকে জানান। ঘটনার খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ ছিনতাইকারী মো: জাকারিয়া রুবেলকে মাইক্রোবাসসহ আটক করলেও অপর আসামীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মইনুল হকের লাশ উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে এবং আহত সাহেদ আহমদকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামীকে বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় নিহত মইনুল হকের ছোট ভাই মো: আয়নুল হক বাদি হয়ে ৪ জনকে আসামী করে বিয়ানীবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ১০ (২৯-০৪-২০১৩)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে বিয়ানীবাজার থানার এসআই মাহমুদ হাসান নাঈম ৪ জনকেই অভিযুক্ত করে ২০১৩ সালের ৭ আগষ্ট আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-৮৬) দাখিল করেন এবং ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারী চার্জগঠন করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য শুরু হয়।
দীর্ঘ শুনানী ও ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত আসামী মো: জাকারিয়া রুবেলকে ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো বিনাশ্রমে ৬ মাসের ও ৩৯৩ ধারায় ৩ বছরের কারাদন্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো বিনাশ্রমে ২ মাসের এবং ৩২৫ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৩ বছরের কারাদন্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো বিনাশ্রমে ২ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। অপর আসামী রুবেল, মো: কামরুল হক উরফে হাসান ও আতিকুর রহমান লাভলুদের বিরুদ্ধে আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে আদালত বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট এসএম পারভীন ও স্টেট ডিফেন্স এডভোকেট ফারজানা হাবিব চৌধুরী মামলাটি পরিচালনা করেন।