বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আর সে কারণেই দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে সহযোগিতার সেই সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে। গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দুই যুগের মধ্যে উভয় দেশের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হওয়ার স্বপ্ন মূর্ত হয়ে ওঠে।
পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে চলার পথরেখা প্রণীত হয়। এ সময় পাঁচটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয় এবং দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেন।
নিকট অতীতে ছিটমহলসহ স্থল ও জল সীমান্তের অনেক বিরোধ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্ধশতাধিক অভিন্ন নদী রয়েছে। সেগুলোর পানিবণ্টন নিয়েও সমস্যা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সফরে সিলেটের কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তার খবর শুনেই সিলেট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে। দুই প্রধানমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলো উন্মোচন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১। আগামী মাসে এটি উৎপাদনে যেতে পারে। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে আনুমানিক ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। উদ্বোধন করা হয়েছে ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেল সেতুর। খুলনা ও মোংলা বন্দরের মধ্যে রেলযোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ভারত বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ২৫টি প্যাকেজে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নির্মাণ সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেললাইনের বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনকে ‘ডুয়াল গেজ’ লাইনে রূপান্তরেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন ছাড়াও সম্পাদিত এমওইউগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের মধ্যে সহযোগিতা, ভারতের ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ ও ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি সেবা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও প্রসার ভারতীর মধ্যে সমঝোতা এবং স্পেস টেকনোলজি বা মহাকাশ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা।
বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল দ্রুততম সময়ে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরেও সেই চুক্তি সম্পাদিত না হওয়ায় দেশের মানুষ কিছুটা হলেও হতাশ হয়েছে। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী আবারও আশ্বস্ত করেছেন দ্রুততম সময়েই এই চুক্তি সম্পাদিত হবে। আমরাও তেমনটাই আশা করছি। দুই নেতার বৈঠকে কানেক্টিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং ঋণরেখার (এলওসি) মতো খাতগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই দেশ ক্রমেই সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছাবে।