কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। সরবরাহ সংকটে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েছে জ্বালানির মূল্য। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে ইউরোপজুড়ে জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কারণ অঞ্চলটি মূলত রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। তবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার পাল্টা ব্যবস্থায় ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পুুতিন প্রশাসন। চাপ বেড়েছে বিশ্ববাজারে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দেশে বেড়েছে সৌর প্যানেলের চাহিদা।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জার্মানিতে সৌর প্যানেল স্থাপন বেড়েছে ২২ শতাংশ। দেশটির আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক ভবন, ছোট ছোট বাড়ি ও কারখানায় প্যানেল স্থাপন করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় শিল্প ও জ্বালানি কোম্পানি শেনাইদা ইলেকট্রিক (এসবিজিএসএফ) জানিয়েছে, আগের বছরের অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় জার্মানিতে তার সৌর-চালিত হিটিং সিস্টেমের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
একইভাবে জার্মান সৌর ব্যাটারি বিপণন প্রতিষ্ঠান সোনেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অলিভার কোচ বলেছেন, গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি ক্রয়াদেশ আছে তাদের কাছে। কারণ জনগণের মধ্যে নিজেদের বাড়িঘরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যেও জ্বালানির মূল্য বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেম সম্প্রতি জানিয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবর থেকে জ্বালানির মূল্য বর্তমান দুই হাজার ৩৩১ ডলার থেকে বাড়িয়ে বছরে গড়ে চার হাজার ১৯৮ ডলার করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জানুয়ারিতে সংস্থাটি মূল্য ফের আপডেট করতে পারে। তখন গড় জ্বালানি মূল্য পাঁচ হাজার ৯১৪ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে খরচ কমাতে দেশটির নাগরিকরা সৌর প্যানেলের দিকে ঝুঁকছে, বেড়েছে চাহিদা।
যুক্তরাজ্যের সৌর শক্তি জানায়, নতুন সৌর প্যানেল স্থাপন রেকর্ড গতিতে হচ্ছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আবাসিক ছাদে ৯৫ মেগাওয়াট লাগানো হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
যদিও ২ থেকে ৫ কিলোওয়াটের ছোট আকারের সোলার স্থাপনের মূল্য গত বছরে তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় এক হাজার ৬৮৪ ডলার হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে খরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় খালের ওপর সৌর প্যানেল বসিয়ে ছাউনি তৈরি করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল ক্যালিফোর্নিয়ার টারলক ইরিগেশন ডিস্ট্রিক্ট (টিআইডি) খালের তিনটি অংশে ৮ হাজার ৫০০ ফুটের সৌর প্যানেল স্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ও খালের পানির বাষ্পীভূত হওয়া ঠেকানো যাবে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর রুশ অর্থনীতির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার জ্বালানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে ইউরোপ। এমন পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির দেশগুলোতে তেল-গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে রাশিয়া। এতে বিশ্বজুড়েই সংকট দেখা দিয়েছে। তাই সংকট মোকাবিলায় দেশগুলোতে সোলার প্যানেলের ব্যবহার বাড়ছে।