কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে তারা।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনায় বসে। তারই ধারাবাহিকতায় ইভিএমের ত্রুটি ধরার জন্য বিশেষজ্ঞদের সামনে প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকেও বিশেষজ্ঞ টিম এনে মেশিনটি যাচাইয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায় ইসি। এরপর আবার রাজনৈতিক সংলাপেও দলগুলোর সঙ্গে এই যন্ত্র ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়।
সবার মতামত একীভূত করে ও বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে গত ২৩ আগষ্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে এই ভোটযন্ত্র ব্যবহার করা হবে।
রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি জানান, কমিশন তিনটি বিষয় বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে সবদিক বিবেচনায় নিয়েছেন তারা। প্রথমত দলগুলোর মতামত, দ্বিতীয়ত আগের প্রায় ৬শ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ও তৃতীয়ত সেসব নির্বাচনে ভোটারদের ফিডব্যাক। এই তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তে নিয়েছে ইসি।
তবে তিনি বলেন, বর্তমান যে সক্ষমতা আছে এতে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। ১৫০ আসনের জন্য আরও দেড় থেকে দুই লাখ নতুন ইভিএম কিনতে হবে, নিতে হবে নতুন প্রকল্প।
ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান জানিয়েছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ধরনের কেনাকাটা আছে। এ বিষয়ে যা করণীয় আছে প্রত্যেকটা লেবেলে যোগাযোগের মাধ্যমে তা শিগগিরই করে ফেলব। আগামী দুই মাসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলব, যাতে তিন মাসের মধ্যে কেনাকাটা শুরু হয়।
তিনি বলেন, যেসব জায়গায় অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে, সেখানে আগামী মাসের (সেপ্টেম্বর) মাঝামাঝি আমরা প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়ে দেব। অনুমোদন হলে কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হবে, এমনটা আশা করতে পারি।
এর আগে ২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি ইসি। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এমন পরিস্থিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একই সঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানে ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
সেই সিদ্ধান্তের আলোকে কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয়। নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় তারা। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ছয়টি আসনে) ও অন্যান্য উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই মেশিন ব্যবহার করে বিগত কমিশন। বর্তমানে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ইভিএমের ব্যবহার আরও বাড়াতে চায়। এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনের মতো তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।