কাজিরবাজার ডেস্ক :
২০২০ সালের আগষ্ট মাসে ৫ লিটার সয়াবিন তেল কেনা যেত ৫০৫ থেকে ৫১৫ টাকায়। নতুন নির্ধারিত দামে এখন পাঁচ লিটার বোতল ৯৪৫ টাকা। আর ২০২০ সালের ১১৩ টাকা লিটার তেল এখন ১৯২ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে ভোক্তা পর্যায়ে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৯৪ শতাংশ।
যদিও চলতি বছরেই এর চেয়ে বেশি দামে ওঠে ভোজ্যতেল। গত মে মাসে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করা হয় এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ করেন মিল মালিকরা৷ ৫ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৮৫ টাকা। পাম তেলের লিটার ১৭২ টাকা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ফলে দেশের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে প্রতি লিটার ২০০ টাকার উপরে উঠে যায়। এছাড়া বছরের প্রথম ভাগে যুদ্ধ শুরুর আগে-পরে বাংলাদেশেও কয়েক দফায় বাড়ানো হয় ভোজ্যতেলের দাম।
এর মধ্যে সম্প্রতি বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমে আসে প্রায় ৩০ শতাংশের মতো। দেশের বাজারে দাম সমন্বয়ের দাবি উঠলে কিছুটা কমানো তেলের দাম। গত ১৭ জুলাই দেশে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের ১৪ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারিত হয়। কিন্তু এই কমানো দামে কোথাও তেল কিনতে পারেননি ক্রেতারা।
দাম কমানোর পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকায় এবং পাম তেল ১৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিন তেলের দাম পুনর্র্নিধারণ করায় এখন থেকে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৯২ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ৯ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা এবং পাম তেল ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া পাঁচ লিটার বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪৫।
আইন অনুযায়ী, তেলের দাম বাড়াতে হলে তা ১৫ দিন আগে জানাতে হয়। সেটি মানা হয়নি এবারের দাম নির্ধারণে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়, যার প্রভাবেই ভোজ্যতেলের দামে ঊর্ধ্বগতি। অর্থনীতির সার্বিক উন্নতি না হলে পণ্যমূল্যের এই ঝুঁকি থেকেই যাবে। সেক্ষেত্রে ভোক্তাকে কম কিনে কম খাওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। একই সঙ্গে মানুষের আয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দেন ক্যাব সভাপতি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে দেশের বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১০৪ টাকা। ২০২০ সালে সেটি বেড়ে হয় ১১৩, ২০২১ সালে ১৩০ এবং ২০২২-এর শুরুতে এসে হয় ১৬৮ টাকা।
আর পামওয়েলের লিটার (খোলা) ২০১৯ সালে ছিল ৫৮ টাকা, ২০২০ সালে ৭৮, ২০২১ সালে ১০৭ এবং ২০২২ সালের শুরুতে হয় ১৫০ টাকা।
এর আগে ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকায় উঠেছিল। তখন ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দেশে বছরে ১৪ লাখ টনের মতো পরিশোধিত ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। মোট আমদানির ৪০ শতাংশের মতো সয়াবিন তেল। কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত তেল আমদানি করে পরিশোধন করে। তারপর তেলের একটি অংশ বোতলে ভরে বাজারজাত করে। বাকিটা খোলা তেল হিসেবে বাজারে ছাড়া হয়।