কাজিরবাজার ডেস্ক :
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় গেটকিপার সাদ্দাম হোসেন ও মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তফার দায় পেয়েছে রেলওয়ের গঠিত আরেকটি তদন্ত কমিটি। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে রেল লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম বা সাইরেনের ব্যবস্থাসহ ১১টি সুপারিশ করেছে কমিটি।
এর আগে ১৬ আগষ্ট রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এই দুর্ঘটনার জন্য গেটম্যান ও মাইক্রোবাসচালক চালককে দায়ী করে। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী।
মঙ্গলবার (২৩ আগষ্ট) রেলওয়ের চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটিও প্রতিবেদন দেয়। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রেলপথ) আরমান হোসেন। বাকি সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জাকির হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রীক) মোস্তফা জাকির হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী তারেক মো. শামস তুষার।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, এই তদন্ত কমিটিও দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাসচালক ও গেটকিপারকে দায়ী করেছে। গেটকিপার সাদ্দাম হোসেনকে চাকরিচ্যুত করতে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তিনি রেলওয়ের স্থায়ী কর্মী নন। একটি প্রকল্পের আওতায় গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী করা চালক গোলাম মোস্তফা নিরু দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে নিহত হন। তদন্ত কমিটি বলছে, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ট্রেনচালক, পরিচালক (গার্ড), গেটম্যান ও দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
লেভেল ক্রসিং এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ১১টি সুপারিশ করেছে কমিটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্মিং বা সাইরেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ট্রেন নির্ধারিত দূরত্বে এলে সাইরেন বেজে উঠবে। প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে স্বয়ংক্রিয় গেট রাখতে হবে। কেউ চাইলেও যেন তুলে না ফেলতে পারে। লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যানদের খাকি পোশাক দিতে হবে। লেভেল ক্রসিংগুলোয় নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, ক্রসিংয়ে গেটম্যানদের ঘরে ল্যান্ডফোনের ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎসংযোগ দিতে হবে।
প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে অন্তত তিনজন গেটম্যানকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে। তাদের জন্য আবাসনের সুবিধা রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। লেভেল ক্রসিংয়ের আগে স্বল্প উচ্চতার গতিরোধক স্থাপন করা, লেভেল ক্রসিং এলাকায় পারাপারের নিয়মকানুন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখে বাড়ি ফেরার পথে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ১১ মাইক্রোযাত্রী মারা যান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও দুজন নিহত হন। নিহত সবার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়।