স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর দক্ষিণ সুরমা লালমাটিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ট্রাক চালক ও হেলপারর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভোর রাতে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, এয়ারপোর্ট থানার ধোপাগুল এলাকার ফউজদার তালুকদারের পুত্র মো. ইব্রাহিম তালুকদার (২৩), বিশ্বনাথ উপজেলার শ্বাসরাম গ্রামের রুস্তুম আলীর পুত্র ফজর মিয়া (২৪) ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের পুত্র জয়নাল মিয়া (২৩)।
এদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায়ের জন্য পুলিশ গ্রেফতারকৃতদেরকে সিলেট মহানগর দ্বিতীয় হাকিম আদালতে হাজির করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই আদালতে আসামীদের জবানবন্দী চলছিল বলে জানান মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে হত্যাকান্ডের বরাত দিয়ে ওসি আক্তার হোসেন জানান, হত্যার পর ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ট্রাকটি ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলো ধৃত আসামীরা। পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ট্রাকটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচক লালমাটিয়ায় সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ের পাশে রেখে আসে। যেখানে দুর্গন্ধের জন্য কোনো গাড়ি থামে না বরং দ্রুত প্রস্থান করে। তিনি আরো জানান, গতকাল শনিবার ভোরে সদর উপজেলার ধোপাগুল থেকে ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে আম্বরখানা থেকে গ্রেফতার করা হয় তার সহযোগী ফজর আলীকে। তাদের দেওয়া বর্ণনা মতে ওসি জানান, পুলিশ ফজরের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিহতদের লুন্ঠিত মোবাইল সেট ও ট্রাকের টায়ার বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা জব্দ করে এবং গাড়ির টায়ার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশ পুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা জয়নাল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) নং ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার আইলদীপুরের আতাউর রহমান। ইব্রাহিম ট্রাকচালক ও ফজর হেলপার ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাকটি ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে নিযুক্ত করেন গাড়ির মালিক। জাহাঙ্গীরের বন্ধু ছিলেন রাজু। সে পেশায় কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। পরদিন ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর থেকে ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় সাবেক চালক ও রাজুও নতুন চালকের সঙ্গী হন। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ওসি আখতার হোসেন আরও বলেন, হত্যার আগে তারা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে নিহতদের কাবু করে ফেলে। আর নিহত চালক জাহাঙ্গীরের বন্ধু রাজুও কিছুটা প্রতিবন্ধী টাইপের ছিলো। জাহাঙ্গীর গাড়ি নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে আসায় বেড়ানোর জন্য বন্ধুর সঙ্গী হয়ে প্রাণ হারায় রাজুও। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহিম। গাড়িটি মাধরপুরের জগদীশ পুর ও আউশকান্দি, সর্বশেষ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলে এনে থামায় তারা। এরপর পরিকল্পনা করে লাশ দু’টি চালক ও হেলপারের সিটে বসিয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচ এলাকার লালমাটিয়ায় রেখে যায়। ঘটনাটি স্রেফ দুর্ঘটনা সাজাতে ট্রাকটি রাস্তার পাশে রেখে খুলে নেওয়া হয় ছয়টি চাকা। এরপর জগদীশপুর জয়নালের দোকানে নিয়ে চাকাগুলো বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত ৩ আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন এবং গতকাল শনিবার ময়না তদন্ত শেষে নিহত দু’জনের লাশ তাদের নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেছে। নিহতরা হচ্ছেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বাগদী গ্রামের মো. কাদেরের পুত্র জাহাঙ্গীর মিয়া (২৫) ও একই এলাকার দীন মোহাম্মদের পুত্র রাজু আহমদ (২৫)।