কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৫ আসামি বর্তমানে দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন। আইনি জটিলতা এবং কারো কারো অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় আত্মস্বীকৃত এই খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না।
পলাতক ৫ জনের মধ্যে দুই জনের অবস্থানের তথ্য জানা গেছে। বাকি তিনজন কোথায়, কোন দেশে পালিয়ে আছেন তার নিশ্চিত কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। যে দুই জনের অবস্থান জানা আছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। তবে, ওই সব দেশের আইন বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। কিন্তু দুয়েকটি দেশের, বিশেষ করে আমেরিকা ও কানাডার সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের দেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আইন নেই। এ কারণে তারা এদের ফেরত দিতে চায় না। জঘন্য ও অমানবিকভাবে এই আত্মস্বীকৃত খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। তারা (ওই সব দেশ) মানবতার কথা বলে, অথচ এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের তারা ফেরত দিচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়। এরপর ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৫ জনের রায় কার্যকর হয়। আরও ৫ জন এখন বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পালাতক আসামিরা হলেন- নুর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রাশেদ চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদ দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন। তাকে সেখান থেকে এনে ২০২০ সালের ৫ মে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, নুর চৌধুরী কানাডায়, খন্দকার আব্দুর রশিদ পাকিন্তান অথবা আফ্রিকার কোনো দেশে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া শরিফুল হক ডালিমের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত তথ্য নেই। তিনি পাকিস্তান, লিবিয়া বা স্পেনে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। আর মোসলে উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত তথ্য জানা যায় না।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি দীর্ঘ দিনের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সব সময়ই এ দাবি করে আসছে। বিশেষ করে শোকের মাস আগস্ট শুরু হলে এই দাবি জোরালো হয়। এবারও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোকের কর্মসূচিগুলোতে জোরেশোরে এই দাবিটি উচ্চারিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকার বিভিন্নভাবে তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশে তারা পালিয়ে আছেন, সেসব দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরাতা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও ওই সব দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়েছে। খুনিদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করছে বলেও জানা গেছে। তবে এনিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতির কথা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
শনিবার (১৩ আগষ্ট) এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন সময় অন্যান্য সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। সেই সমস্যাগুলো একটা একটা করে শেষ করতে হচ্ছে।