কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
আড়াই বছর থেকে বন্ধ হওয়া সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারির সার্বিক অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন ও তদন্ত করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, খনিজ উন্নয়ন ব্যুরো ও জ¦ালানি সম্পদ বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (আইন-১) মোঃ শওকতুল আম্বিয়া লোভাছড়া পাথর কোয়ারি পরিদর্শনে আসেন। তিনি নদীপথে নৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে প্রায় ২ ঘণ্টা কোয়ারির বর্তমান সার্বিক অবস্থা দেখার পাশাপাশি জব্দকৃত পাথরের স্তুপগুলোও দেখেন। এ সময় সহকারি সচিব মোঃ শওকতুল আম্বিয়ার সাথে তার সফর সঙ্গী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পিএএ যুগ্ম সচিব বেগম শাহিনা খাতুন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (আইন) খন্দকার মোঃ ফজলুল হক, খনিজ ও সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপ-পরিচালক মামুন রশিদ। কোয়ারি পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সুমন্ত ব্যানার্জি, কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম সহ ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ও পাথর ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তারই আলোকে পাথর কোয়ারিগুলোর বর্তমান পরিবেশ কেমন রয়েছে, খুলে দেওয়ার উপযুগী কি না তা যাচাই-বাছাই করার জন্য মূলত লোভাছড়া পাথর কোয়ারি পরিদর্শনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখতে এসেছেন। পাশাপাশি লোভাছড়ার নদীর দু’পারে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জব্দকৃত প্রায় ২ কোটি ঘনফুট পাথরের মালিকানা নিয়ে কোয়ারির সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশ ও বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ীর দায়েরকৃত উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বেশ কয়েকটি রিটপিটিশন মামলা কি অবস্থায় রয়েছে তা কোয়ারি পরিদর্শন ও তদন্তকালে জানতে চেয়েছেন সরেজমিনে আসা সহকারি সচিব মোঃ শওকতুল আম্বিয়া সহ তাহার সফর সঙ্গী সরকারি কর্মকর্তারা। বন্ধ হওয়ার আগে বিগত কয়েক বছর থেকে কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে মারাত্মক পরিবেশ বিধ্বংসী যান্ত্রিক বাহন দিয়ে বিশাল বিশাল গর্ত ও লোভা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দ্রর্যের অপরুপ লীলা ভূমি লোভাছড়া নদীর দু’পাড়ে ব্যাপক ভাঙ্গনের ফলে এবং অপরিকল্পিত ভাবে পাথর উত্তোলনের কারনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে পাথর কোয়ারি এলাকা। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে বারবার পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল জানিয়ে আসছেন। তবে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থানের একমাত্র মাধ্যম লোভাছড়া পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার জন্য পাথর ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে আসছেন। সচেতন মহল সরকারের পক্ষ থেকে কোয়ারি খুলে দেওয়া হলে পরিবেশ রক্ষা করে যান্ত্রিক বাহনের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন না করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন এবং সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোয়ারির লীজ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত যে, লোভাছড়ার পাথর কোয়ারির লীজের মেয়াদ ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল শেষ হলে কোয়ারি থেকে সব ধরনের পাথর উত্তোলন, বিপণন, পরিবহন বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। লীজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সে সময় কোয়ারির দু’পারে মজুদকৃত প্রায় ২ কোটি ঘনফুট পাথর জব্দ করে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর। এর পর থেকে সরকারি নির্দেশের কারনে লোভাছড়া পাথর কোয়ারি বন্ধ রয়েছে। জব্দকৃত ২ কোটি ঘনফুট পাথর পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট ৩ বার নীলামে তুললেও এ নিয়ে নীলামকারিরা পাল্টাপাল্টি উচ্চ আদালতে কয়েকটি রিট মামলা কারনে জব্দকৃত পাথর নীলাম নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।