স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় চলছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। কেউ কেউ যুবকের মৃত্যুর দায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ওপর চাপাতে চাইছেন। তবে যুবকের পরিবার বলছে, তার মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোক করার কারণে।
গত সোমবার দিবাগত রাতে মারা যান তিনি। নগরীর চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়কে শামসুদ্দিন হাসপাতালের কাছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মারা যাওয়া নিজাম উদ্দিন (৩৮) নগরীর বনকলাপাড়ার ১০৫/বি১৪ নং বাসার বাসিন্দা। তার বাবার নাম মঞ্জব আলী। বিবাহিত নিজাম উদ্দিনের দুটি মেয়ে শিশু আছে। তিনি নগরীর আম্বরখানাস্থ ফ্রিডম জেনারেল হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়ের চাকরি করতেন।
নিজাম উদ্দিনের বড় ভাই দুলু মিয়া বলেন, ‘বনকলাপাড়ায় আমার বাসার নম্বর ১০৫/২৩। নিজাম আমাদের থেকে আলাদা বাসায় থাকতো। নানামুখী চাপের মধ্যে ছিল সে। ছোটবেলায় তার টাইফয়েড হয়েছিল, তাতে এক পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতো। আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ছোটবোন জেসমিন বেগমকে শ্রীমঙ্গলে বিয়ে দিয়েছি। সে অসুস্থ, শরীরে টিউমার। চিকিৎসার জন্য সে সিলেটে আসে। নিজাম উদ্দিন তাকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যায়, পরে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার অবধি টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি নিজাম। ২০ হাজার টাকার দরকার। গতকাল সে বোনজামাইকে ফোন দিয়ে টাকার কথা বলেছিল, কিন্তু তিনি ৬ হাজার টাকা দিতে পারবেন বলে জানান। এ ছাড়া বোনের জন্য ২ ব্যাগ রক্তেরও প্রয়োজন। টাকা আর রক্তের চিন্তায় পেরেশান ছিল নিজাম।’
‘আমাদের বড়বোন মারা গেছেন। তার দুই মেয়ে আমাদের কাছে থাকে। এক ভাগ্নি অন্তসত্ত্বা। তার চিকিৎসায়ও টাকা খরচ করেছে নিজাম।’ দুলু মিয়া আরো জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরছিলেন নিজাম উদ্দিন। পথিমধ্যে চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার সড়কে শামসুদ্দিন হাসপাতালের কাছে সড়ক বিভাজকের (রোড ডিভাইডার) পাশে তিনি অসুস্থ হয়ে রেলিংয়ের মধ্যে পড়েন। তার (দুলু) স্ত্রী ছিলেন হাসপাতালে। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে পথচারীদের সহায়তায় সেখান থেকে নিজামকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দুলু মিয়া বলেন, ‘বাসায় আনার পর আমরা দেখি নিজামের হাত-পা ঠান্ডা। তাৎক্ষণিক তাকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে আমরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাই। সেখানে পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান যে, নিজাম মারা গেছে।’
এদিকে, নিজাম উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে তর্ক-বিতর্ক চলছে। সেখানে কেউ কেউ লিখেছেন, ওই সড়ক বিভাজকে যে বৈদ্যুতিক খুঁটি আছে, সেখান থেকে বিদ্যুৎ সড়ক বিভাজকের রেলিংয়ে প্রবাহিত হয়। নিজাম উদ্দিন রেলিংয়ে হাত দেওয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।
তবে নিজাম উদ্দিন বড় ভাই দুলু মিয়া এসব কথাবার্তাকে ‘অহেতুক’ ও ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিজাম মারা যেতো, তাহলে তার শরীরে কোনো না কোনো স্পট (চিহ্ন) থাকতো। তাছাড়া অসুস্থ হওয়ার পর যেসব পথচারী তাকে ধরাধরি করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিলেন, বিদ্যুৎ থাকলে তো তারাও স্পৃষ্ট হতেন। নানান চাপে সে স্ট্রোক করেছে।’
একই কথা বলেছেন নিজাম উদ্দিনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। আজ সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি সড়ক বিভাজকের রেলিংয়ে হাত দিয়ে দেখেছি, কোনো বিদ্যুৎ ছিল না। আশপাশের লোকজন, লাইটেস স্ট্যান্ডের চালকদের জিজ্ঞেস করেছি যে, সেখানে কোনো বৈদ্যুতিক কাজ করা হয়েছিল কিনা, কোনো তার ছিঁড়ে পড়েছিল কিনা, তারা না করেছেন।’
নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘চৌহাট্টা এলাকায় কাল রাতে এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। লোকজন তাকে বাসায় নিয়ে যায়। তার মৃত্যুর তথ্য আমাদের জানা নেই।’