স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নবঘোষিত আহবায়ক কমিটির প্রতি অনাস্থা ও প্রত্যাখান করেছে দলের তৃণমূলের নেতারা। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিএনপি থেকে আগতদের দুই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
শনিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের পক্ষে এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোহা. ইশরাকুল হোসেন শামীম।
তিনি বলেন, ‘গত মার্চ মাসে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক জেলা ও মহানগরের পুরাতন আহবায়ক কমিটি বাতিল করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, জেলা ও মহানগর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন না করে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্রত্যক্ষ মদদে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য সিলেট জেলা ও মহানগর পার্টির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনকালে দায়িত্বশীল নেতারা ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া কথিত কমিটি গঠন করেন যে কারণে সিলেটের নেতাকর্মীরা দারুণ বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।’
ইশরাকুল হোসেন শামীম বলেন, ‘বর্তমান জেলা আহবায়ক কমিটির আহবায়ক প্রায় ১৫ বছর আগে পার্টি ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন। বিএনপির একটি সদস্য পদও বিগত পনের বছরে পাননি। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তাকে জাতীয় পার্টির জেলার দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সদস্য সচিব হিসেবে যাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তিনিও বিএনপির অন্ধ সমর্থক এবং ব্যবসায়ী ছিলেন মাত্র।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম যুগ্ম আহবায়ক পদে প্রায় বছর খানেক আগে বিএনপি থেকে আগত জনৈক এক ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। একইভাবে বিএনপি যুবদলের লোককে সিলেট মহানগর আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে বহিরাগত নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে জন্মলগ্ন থেকে জাতীয় পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টিতে বসন্তের কোকিলদের সমন্বয়ে আহবায়ক কমিটির তালিকা ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা পার্টির বৃহত্তর স্বার্থে মেনে নিতে অপারগ।’
আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভাসহ অগণিত নেতাকর্মী তাদের প্রাণের সংগঠন জাতীয় পার্টির এই দুই কমিটিকে অসহযোগিতা করতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারি দেন তারা।
তিনি বলেন, ‘কথিত আহবায়ক কমিটির কর্তা ব্যক্তিরা সিলেটে বন্যাদুর্গত বানভাসি মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসী জীবন-যাপনে ব্যবস্ত। জেলা আহবায়ক, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও সদস্য সচিব দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। কমিটি অনুমোদন পাওয়ার পর অদ্যাবধি একটি সভা কিংবা পরিচিতি অনুষ্ঠান করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে নিজেদের অসহায়ত্বের বর্ণনা দিয়ে সাবেক এই যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘আমাদের অভিভাবক মরহুম রাষ্ট্রপতি এরশাদ সিলেটের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে অত্যন্ত স্নেহ মমতার আচলে লালিত করে গেছেন। আজ তাঁর অবর্তমানে আমরা সিলেটের নেতাকর্মীরা অকুল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমরা অচিরেই এসব ষড়যন্ত্র ও ভুল সিদ্ধান্তের পরিসমাপ্তি চাই। আমরা চাই সিলেটে জাতীয় পার্টি পল্লী বন্ধুর দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে বহাল থাকুক।’ তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রকৃত পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে বর্তমান সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও সম্মেলন আয়োজনের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. গিয়াস উদ্দিন আহমদ এডভোকেট, জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল মালিক খান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পদক আহসান হাবিব মঈন, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহমান চৌধুরী এডভোকেট, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাসির আহমদ, সাবেক সহসভাপতি মজির উদ্দিন চাকলাদার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. বশির উদ্দিন, মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল মজিদ টিয়া, জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খলকু মিয়া ও মো. দুলাল আহমদ, মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৌলভী আবুল কালাম দুলাল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আহমদ মুরাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ সেলু, জাতীয় পার্টি নেতা গিয়াস উদ্দিন এডভোকেট, সিরাজ উদ্দিন খান এডভোকেট, জেলা জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি শাহজাহান সিরাজী, জেলা জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহবায়ক এম মুর্শেদ খান, সদস্য সচিব এম বরকত আলী, জেলা জাতীয় মহিলা পার্টির আহবায়ক রুনা চৌধুরী, জেল জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক আহবায়ক তাজ উদ্দিন এপলু প্রমুখ।