কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বজুড়ে চলমান মন্দাভাব ঠেকাতে সরকারের সাশ্রয়ী নীতির অংশ হিসেবে সমন্বয় করে লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তগুলো সাময়িক বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, টেকসই ফল পেতে হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অযৌক্তিক ব্যয়, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে চলমান লোডশেডিং পরীক্ষামূলক জানিয়ে পুরো বিষয়টি সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। শুক্রবার গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সময়ের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে লোডশেডিং কীভাবে আরো কমিয়ে সূচি মেনে চলা যায়, সে বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হবে।
অপরদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এলাকাভিত্তিক শিডিউল লোডশেডিং ও সরকারি অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ ভাগ কমানোসহ জ্বালানি সাশ্রয় করতে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো সাময়িক। তারা বলছেন, ভর্তুকি দিয়ে হলেও সরকারকে জ্বালানির পর্যাপ্ত আমদানি চালু রাখতে হবে। নয়তো উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সাশ্রয়ী পদক্ষেপে টেকসই ফল পেতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অযৌক্তিক ব্যয় ও অনিয়ম বন্ধ করা প্রয়োজন।
এদিকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। বলেন, জ্বালানি আমদানি না করলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ডিজেল সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখা কতটুকু ফলপ্রসূ হচ্ছে, সেটি অঙ্ক কষে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘দেখতে চাই আগামী ১০ দিনে কী হলো। ১ হাজার মেগাওয়াট বন্ধ করেছি, ডিজেল সেভ করেছি। এরপর পরিস্থিতি কী হলো? আমি যদি লোডশেড না করতাম তাহলে ইকনোমিক্যালি আমাদের কতটা পক্ষে আসত, আর লোডশেড করার কারণে আমার কতটুকু লস হলো। এখন ক্যালকুলেশনের মধ্যে আছি।’
ডিজেলের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘আমাদের ডিজেলে পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে ১ হাজার মেগাওয়াট মাত্র। মোট চাহিদার ২৫ হাজারের মধ্যে মাত্র ১ হাজার তেলভিত্তিক ডিজেল দিয়ে চালানো হয়। এটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এর কারণ ডিজেলের দাম অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এছাড়া ডিজেল যে পরিমাণ আমদানি করা হয় তার মাত্র ১০ ভাগ ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এ ১০ শতাংশ কাটঅফ করে দেখছি কী হয়।’
বাকি ৯০ শতাংশ ডিজেল পরিবহন ও সেচে ব্যবহার হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এখানে ১০ ভাগ ডিজেল ব্যবহার কমাতে পারি; আমি বলছি যদি সাশ্রয় করতে পারি। তাহলে ১০ শতাংশ ডিজেল আমদানির ডলারটা সেভ হয়। আমাদের যথেষ্ট অর্থ রয়েছে, কিন্তু আগামী কয়েক মাস ডলারের ওপর যেন চাপ সৃষ্টি না হয়, সে কারণে পূর্ব সতর্কতা নেয়া হয়েছে।’
বিশ্ববাজারে জ্বালানির ঊর্ধ্বগতি সহসা কমছে না বলেই মনে করছেন নসরুল হামিদ। তবু চলমান এই অবস্থাকে সাময়িক বলছেন তিনি। কয়লাভিত্তিক রামপাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু করার ওপর আস্থা রাখছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিকল্প ফুয়েলের ক্যাপাসিটি আসছে। এ জন্যই সাময়িক বলছি; সামনের সময়ে ডিমান্ড লোডাউন হবে। তখন ওটা দিয়ে কাভারআপ করতে পারবো।’