চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার গত মাসে শুল্ক কমিয়ে ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছিল। মোট শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত চার দফায় ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময়ে চাল এসেছে সাড়ে চার হাজার টনেরও কম।
ফলে আমদানির কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। চালের দাম ক্রমেই বাড়ছে। চিকন চাল, বিশেষ করে মিনিকেট ও নাজিরশাইল মানভেদে এখন ৬৮ থেকে ৮৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, আটাশ ও পাইজাম চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। তাহলে এত বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি দিয়ে লাভ কি হলো?
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে খুব একটা উৎসাহী নন। তাঁদের মতে, ভারতের বাজারে চালের দাম বেশি। তার ওপর ডলারের যে দাম তাতে আমদানি খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বাজারের বিদ্যমান দামের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। তাই চাল আমদানি করে লোকসানে পড়ার ভয়ে অনেকে চাল আমদানিতে ধীরে এগোচ্ছেন। তাঁরা সম্পূর্ণ শুল্ক তুলে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছেন। তাঁদের এই দাবির সত্যতা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জানা যায়, গত ২২ জুন পর্যন্ত আগের অর্থবছরে ৯ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। তার মধ্যে ছয় লাখ ৮৩ হাজার টন আমদানি করা হয়েছে সরকারিভাবে। সরকার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমেও অনেক চাল সংগ্রহ করেছে। অনেকেই মনে করেন, সঠিক উপায়ে এর একটা বড় অংশ এ সময়ে বাজারে ছাড়া গেলে বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকত। কিন্তু এভাবে হস্তক্ষেপ করার মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা সরকারের আছে কি? ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশেরও (টিসিবি) সে ধরনের সক্ষমতা এখনো গড়ে ওঠেনি।
বাংলাদেশের বাজারে সিন্ডিকেট, মজুদদারিসহ অন্যান্য অসৎ উপায়ে ভোক্তার পকেট কাটার অপচেষ্টা অনেক পুরনো। এর বিরুদ্ধে বাজারে কার্যকর উপায়ে হস্তক্ষেপ করার মতো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে গড়ে ওঠেনি। ট্রাক সেল, ওপেন মার্কেট সেল বাজারে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। কার্ডের মাধ্যমে চাল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অথচ দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।