কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই হাহাকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমেরিকা, ইংল্যান্ড যে জায়গার কথাই বলেন, সব দেশেই কিন্তু বিদ্যুৎ, পেট্রোল, ডিজেল ও জ্বালানি সাশ্রয় করা হয়। সেই উদ্যোগ উন্নত দেশগুলোও নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে জমিসহ গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে করোনা, অপরদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের সময় আমেরিকা রাশিয়ার ওপর যে স্যাংশন দিয়েছে, যার ফলে আমাদের সার ও খাদ্য কিনতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ, ডলার দিয়ে কেনা যায় না। স্যাংশন দেওয়া। এসব কারণে শুধু বাংলাদেশ না বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। খাদ্যের জন্য হাহাকার। এমনকি উন্নত দেশগুলোতে পর্যন্ত সেই হাহাকার দেখা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও আমাদের দেশকে ভালোভাবে চালাতে পারছি। কিন্তু আমাদের এখন থেকেই সর্তক থাকতে হবে এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে। পানি ব্যবহার সেটাও সাশ্রয় করতে হবে। জ্বালানি ব্যবহার সেটাও সাশ্রয় করতে হবে। আর প্রত্যেকে এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে, খাদ্য উৎপাদন করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার। ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় লন্ডনে এক লিটারের বেশি তেল কেউ কিনতে পারে না, খাবারের তেল। আমাদের তো এখনও ইচ্ছা করলে পাঁচ লিটার তেল সবাই কিনতে পারছে। আমরা জোগাড় করে দিচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, প্রত্যেককে যদি আমরা এটা ভাবি যে আমাকে সাশ্রয় করতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের নিজের যার যতটুকু জমি আছে, জায়গা আছে সেখানে আমাকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। একটা তরকারি গাছ বা একটা মরিচ গাছ, যাই লাগানো যায় সবাই লাগান। কোনও জমি ফেলে রাখবেন না। একটা জলাধারে মাছ হোক। গরু-ছাগল-ভেড়া যা পারেন, মুরগি-হাঁস, পাখি-কবুতর পালেন। যে যা পারেন কিছু একটা করেন, যেন আপনার নিজের খাবারের ব্যবস্থাটা আপনি নিজে করতে পারেন। তার ফলে আমাদের কারও কাছে হাত পেতে চলতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে ইউরোপ এবং লন্ডন শহরে দাবানল। লন্ডন শহরে কোনও কারণ ছাড়াই আগুন জ্বলছে বিভিন্ন বাড়িঘরে। রেল লাইনগুলো সব গলে গলে যাচ্ছে, ট্রেন চলতে পারে না। হিথ্রো এয়ারপোর্টে কোনও প্লেন নামতে পারে না, রানওয়ের পিচ গলে যাচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি যেতে পারে না। একটা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব জায়গায়। স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে কিন্তু সব বন পুড়ে যাচ্ছে এবং সেখানে আগুন জ্বলছে। এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে করোনা থেকে উদ্ধার পেতে না পেতেই যুদ্ধের অবস্থা। তার ওপরে এই স্যাংশন। ডলার দিয়ে কেনায় বাধা। সেদিকে যেমন আমাদের সমস্যা অপর দিকে আবার এই ইউরোপ এবং ইংল্যান্ড এসব এলাকায় আমেরিকার সব জায়গায় বন ফায়ার। এমনকি অস্ট্রেলিয়ায়, বিভিন্ন এলাকায়। আফ্রিকান কান্ট্রি সেখানে বিভিন্ন বনে আগুন জ্বলছে। এটা এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে বাংলাদেশে আমাদের নিজেদের আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ, আমরা জানি আমাদের কী কী প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে। সে জন্য আমাদের নিজেদের সঞ্চয় করতে হবে। নিজস্ব সঞ্চয় আপনাদের রাখতে হবে। সেটা খাদ্য হোক, অর্থ হোক যেভাবেই হোক। আপৎকালীন সময়ে যেন আপনার পরিবার কষ্ট না পায়, সেটা আপনাকে ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সরকার সবসময় পাশে আছি। আমরা থাকবো, করবো। কিন্তু এ ছাড়া নিজেদেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি সেটাই আপনাদের আহ্বান জানাই আপনারা সবাই সতর্ক থাকবেন। তাহলে ইনশাল্লাহ, আমরা যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। বন্যা আসবে, ঝড় আসবে- এটা নতুন না। এর সঙ্গে আমাদের বসবাস করতে হবে। এখন আষাঢ় মাস। এই আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র আমাদের যে কোনও সময় বন্যা আসবে। তার জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে। এর আগে যে বন্যাটা হলো সিলেট বিভাগে, নেত্রকোনায়; সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের নিজের দলের লোকেরা, সহযোগী সংগঠন, আমাদের প্রশাসন সেই সঙ্গে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, আমাদের কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনী- সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে, দুর্গত মানুষের পাশে সহযোগিতা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের কষ্ট লাঘব করা, তাদের উদ্ধার করা, তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা, পানির ব্যবস্থা করা; আমরা কিন্তু সব করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। কাজেই মানুষের জন্যই আমাদের কাজ। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। এমন দুর্গম এলাকা ছিল যেখানে কেউ যেতে পারেনি। সেখানে আমাদের পার্টির লোকরা গেছে। হয় যুবলীগ অথবা স্বেচ্ছাসেবক লীগ বা শ্রমিক লীগ বা আওয়ামী লীগ। তারা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে খবর পাঠিয়েছে, তারা নিজেরা নৌকায় করে গিয়েছে। তারা মানুষকে উদ্ধার করেছে।’
এ সময় ৫২টি উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করে সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রত্যেকটা উপজেলার সবারই একটা ঘর আছে, সবারই একটা ঠিকানা আছে। ঠিকানাবিহীন কেউ নাই, গৃহহীন কেউ নাই। আমি আশা করি, আগামীতে খুব শিগগিরই আরও অনেক উপজেলা ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। সবাই একটা ঠিকানা পাবে, সবাই সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমরা চাই। কারণ, আমরা চাচ্ছি আমাদের বাংলাদেশে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীন পুনর্বাসন হবে। প্রত্যেকটা মানুষ তার ঠিকানা পাবে, সেটাই আমরা করতে চাচ্ছি।’