সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফ : আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি

33

কাজির বাজার ডেস্ক

ব্যক্তিগত ও বাসভবনের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দাবি করছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মেয়রের দাবি তাকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার নানা চেষ্টা চলছে।
বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নগরভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন মেয়র আরিফ। মঙ্গলবার রাতে তার বাসার নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যদের প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে আমাকে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে আমার বাসার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা ৬ জন আনসার বাহিনীর সদস্যকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সিলেটে নতুন যোগদান করা আনসার ও ভিডিপি কমান্ডার।
মেয়র আরিফ বলেন, মৌখিক বা লিখিতÑকোনোভাবেই আমাকে বা সিসিকের কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। অথচ গত ৬ বছর ধরে মাসিক বেতনের বিনিময়ে আনসার বাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে নগরভবন ও আমার (মেয়রের) বাসার অফিসসহ সিসিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে আমার (মেয়রের) বাসা ও বাসা সংলগ্ন অফিসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৬ জনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এতে আমার নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে।’
তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘প্রথম মেয়াদে মেয়র থাকাকালীন আমাকে সরকার থেকে দু’জন গানম্যান দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরের মেয়াদে তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকায় মাসিক চুক্তিতে আনসার বাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। শিডিউল করে সিসিকের পানি শোধনাগার ও যান্ত্রিক শাখাসহ (যেখানে সিসিকের বিভিন্ন গাড়ি ও মেশিন রাখা হয়) গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা দিয়ে আসছেন তারা। তাদের মধ্যে থেকে ৬ জনকে আমার বাসা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাখা হয়েছে। কিন্তু গত (মঙ্গলবার) রাতে হঠাৎ করে এই ৬ জনকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এছাড়াও আমার বাসা-সংলগ্ন অফিসে রাখা সিসিকের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল এখন অনিরাপদ। এটা অতি উৎসাহী হয়ে এই বাহিনীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রশাসনের অতি উৎসাহী কতিপয় কর্মকর্তার কর্মকাÐ খোদ সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে। আমার বাসার নিরাপত্তা-সদস্যদের কিন্তু সরকারের নির্দেশনায় প্রত্যাহার করা হয়নি।’
আগামী সিসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র আরিফুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি আমি মহানগরের যেখানে যাচ্ছি এবং আমার সঙ্গে ছবি পর্যন্ত তুলছেন, দেখা যাচ্ছে রাতের বেলা তাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাউকে রিমান্ডে পর্যন্ত নিচ্ছে। আমি তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শপথ করিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের অতি উৎসাহী কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা এমন একজন জনপ্রতিনিধিকে কীভাবে মূল্যায়ন করতে হয় সেটিও সম্ভবত ভুলে গেছেন।’
মেয়র আরিফ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমার বাসায় যদি এভাবে নিরাপত্তা দেওয়া আইনসিদ্ধ না হয় তবে দীর্ঘ ৬ বছর তারা কোথায় ছিলেন? আমি দেখছিÑআমার নগরবাসী থেকে আমাকে দূরে রাখার সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি নগরবাসীর কাছে দোয়া চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলার পর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ভবনের দেওয়ালে ফাটল ও বিভিন্ন ত্রæটির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে নতুন নির্মিত টার্মিনাল ভবনের দেওয়ালে ফাটল ধরা পড়ার পরই সিসিকের উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। সে কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী টার্মিনাল ভবনের নকশায় ত্রæটি রয়েছে। নকশাটি করেছিলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিট্যাক্ট বিভাগ এবং এসজিএমপি। তাদেরকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে এবং ত্রæটি মেরামতের লক্ষ্যে নকশাটি সংশোধন করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার টার্মিনাল ভবনের ওয়েটিং রুমের গøাস ভেঙে পড়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।