আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। খাদ্যসামগ্রীর অপর্যাপ্ততা এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বহু দেশে হাহাকার শুরু হয়েছে। অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। তার ঢেউ বাংলাদেশেও লাগতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। কমতে পারে প্রবাস আয়ের পরিমাণ। ডলারসংকট এরই মধ্যে তীব্র হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলো ঠিকমতো জ্বালানি তেলের এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছে না। মূল্য পরিশোধ বিঘ্নিত বা বিলম্বিত হওয়ায় বাংলাদেশে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থাগুলোর আস্থায় চিড় ধরছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে এবং সংকট উত্তরণের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, গত জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত চার দফা চিঠির মাধ্যমে অর্থ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে ঋণপত্র খোলার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করে বিপিসি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগে বিপিসি চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যথাসময়ে এলসি খোলা ও মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী এলসি খোলা সম্ভব না হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিপিসি। সেই আশঙ্কা সত্যি হলে দেশের পরিবহন, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
শ্রীলঙ্কার অবস্থা আমরা দেখছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মূল্যায়ন অনুযায়ী পাকিস্তান, মিসরসহ আরো অন্তত এক ডজন দেশ কাছাকাছি বিপর্যয়কর অবস্থায় রয়েছে। সেসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনো অনেকটা ভালো। এর পরও বাংলাদেশের সামনে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার এরই মধ্যে বিলাসী পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহ করাসহ আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অফিস সময় বা কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে। আমরা মনে করি, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। যা যা করা প্রয়োজন, তা করতেই হবে। বিলাসী পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ ডলার সাশ্রয়ে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে অর্থনীতির স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে হবে।