সরকারি অফিসের ছাদে সৌর প্যানেল বসাতে পৃথক নীতিমালা হচ্ছে

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারি অফিসের ছাদে সৌর বা সোলার প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পৃথক একটি নীতিমালা হচ্ছে। নেট মিটারিংয়ের আদলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, নেট মিটারিংয়ে গ্রাহক সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সেখানে নিজস্ব ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করার বা অফপিকে বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
নেট মিটারিংয়ে গ্রাহক বিনিয়োগ করলেও সরকারি অফিসের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করলে সেটির বিনিয়োগকারী কাকে ধরা হবে তা নির্ধারণ নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। নেট মিটারিংয়ে ছাদ ভাড়া নিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করা যায়। এক্ষেত্রে সরকার বা সরকারি কোনও সংস্থা নাকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে তা সবার আগে নির্দিষ্ট করা হবে। একই সঙ্গে নেট মিটারিংয়ে বিদ্যুৎ কেনা হয় পাইকারি বিদ্যুতের গড় দরে। আবার অনগ্রিড যেসব সৌর প্যানেল স্থাপন করা হচ্ছে তাতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সৌর বিদ্যুৎ কেনে পিডিবি।
পিডিবি সব শেষ বিসিআরইসিএলের সঙ্গে ১০ দশমিক ২০ সেন্টে সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে। অর্থাৎ এই দাম ১০ টাকার ওপরে। কিন্তু নেট মিটারিংয়ে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য সাড়ে পাঁচ টাকা।
সরকার নেট মিটারিংয়ে যুক্তি হিসেবে বলছে, এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে কোনও জমি কিনতে হয় না। প্রয়োজন হয় না কোন গ্রিডলাইন নির্মাণের। নিজস্ব ছাদ ব্যবহার করলেই হয়। আবার শিল্প গ্রাহক বিদ্যুৎ কেনে আট টাকার ওপরে। সেখানে সাড়ে তিন থেকে চার টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে অর্ধেক দামে সে নিজের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ পেয়ে যায়। আবার ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে সে মুনাফা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, এজন্য কোনও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হয় না। আবার কোনও জ্বালানি খরচও হয় না। এজন্য সরকার ২ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, হাসপাতাল, রেলওয়ে স্টেশন ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানের ছাদ রয়েছে। সেগুলোতে চাইলেই বড় আকারের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বলেন, আমাদের জমি সংকট আছে। এই সংকট কাটাতেই নেট মিটারিংয়ের চিন্তা করা হয়েছিল। এখন দেশের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাড়িগুলোর ছাদ নানা কাজে ব্যবহার হয়। কেউ কাপড় শুকায়, কেউ হাঁটে, কেউ বাগান করে। কিন্তু সরকারি ভবনগুলোর ছাদে এমন কিছুই হয় না। সেগুলো অবহেলায় পড়েই থাকে। এই অবস্থায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সরকারি ভবনের ছাদকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে সোলার প্যানেল স্থাপন করা যায়। তিনি বলেন, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের অধীন ভবনগুলোতেও তারা ওই সোলার প্যানেল বসাতে আগ্রহী। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন অনেক ভবনেও এই পদ্ধতি কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে জমি ছাড়াই আমরা বেশ কিছু জায়গা ব্যবহার করে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারবো। পাশাপাশি জ্বালানি সংকটের এই সময়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার আমরা বাড়াতে চাই।