স্টাফ রিপোর্টার :
কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়া দক্ষিণ সুরমার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। পাশাপাশি নগরীর উত্তর সুরমা পানি ধীরস্থির ভাবে কমছে। তবে পানি বন্দি মানুষজন পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। নদ-নদীর পানি প্রতিটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙ্গে গেছে রাস্তা-ঘাট। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘর-বাড়ি ও দোকানপাঠ। এছাড়া ভেসে গেছে গবাদিপশু ও মৎস্য খামারের কোটি কোটি টাকার মাছ। এদিকে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলেছে মানুষজন।
এমন অবস্থায় সরকারি সহায়তাও যথাসময়ে না পৌঁছায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন। গত বন্যায় ত্রাণ সহযোগিতা নিয়ে প্রশাসন তৎপর থাকলেও এবার তা অপ্রতুল মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। তারা বলেন, আগে বন্যা কবলিত মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।
এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহমান থাকায় জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুশিয়ারার পানি বেশি বৃদ্ধি পেলে জুড়ি নদীর মোহনা দিয়ে উল্টো হাকালুকির হাওরে প্রবেশ করে। স্থানীয়দের ভাষায় গাঙ উজান হয়ে যায়। সেই সঙ্গে পাহাড়ি নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করে মৌলভীবাজারের বড়লেখা-জুড়ির বিস্তৃর্ণ অঞ্চল প্লাবিত করে হাকালুকিতে প্রবেশ করে। এতে করে ৬ উপজেলা বেষ্টিত হাকালুকির তীরবর্তী অঞ্চলের লোকজন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে পড়েছেন। মানুষ বাড়ি ঘর ছাড়া হয়েছেন। রাস্তাঘাট ডুবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কুশিয়ারা নদী তীরে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের বাজারের শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। হাসপাতাল ও উপজেলা চত্ত্বরে পানি থৈ থৈ করছে। বিশেষ করে হাকালুকি হাওরে যুক্ত ভারত থেকে নেমে সুনাই নদী, ফানাই, আন ফানাই, কন্টিনালা, জুড়ি। এসব নদীতে উজানের ঢলে ৬ উপজেলা বেষ্টিত হাকালুকির তীরবর্তী সবগুলো উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারা সংলগ্ন হ্কাালুকির পানি প্রবাহমুখে থাকা ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বাড়িঘর ছেড়ে মানুষজন রেললাইনে, সড়কের ধারে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছেন। এরই মধ্যে ডুবে গেছে হাকালুকির পশ্চিম তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট পর্যটন কেন্দ্র। যেখান থেকে দাঁড়িয়ে হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য অবলোকন করেন পর্যটকরা। সেই স্থান এখন পানিতে তলিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এবার কুশিয়ারা ও জুড়ি-বড়লেখা হয়ে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে নেমে আসা ভারত থেকে নেমে আসা নদীগুলোর পানিতে ডুবছে সিলেটের আরো ৬ উপজেলা।
জানা গেছে, এবারের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট নগরীর ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৯৫ ভাগের বেশি এলাকা, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট এলাকার ৮০ ভাগের উপরে এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়। আর সুনামগঞ্জ জেলার ৯০ ভাগ এলাকাই ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে পড়ে। ২০০৪ কিংবা ১৯৮৮ সালের বন্যা নয়, ১২২ বছরের ইতিহাসে এমন বন্যা দেখেননি কেউ। টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এই সিলেটজুড়ে।
এদিকে, চলমান বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৪৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- ১৭ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে এ পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সামনে কয়েক দিন বৃষ্টি কম হবে। দিনে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। রাতে খানিকটা বৃষ্টি হলেও সহনীয় মাত্রায় হবে। এছাড়া উজানেও তেমন বৃষ্টি হচ্ছে না। এ অবস্থায় কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে তাদেরও।