কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতীয় নির্বাচনের আগে ইভিএম (ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিন) নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ কিছু রাজনৈতিক দল সব আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়ে ইতিবাচক। তবে ইভিএম নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিএনপিসহ কিছু দলের। তাই এ বিষয়ে প্রযুক্তিবিদদের মতামত নিয়েছে ইসি। মতামত প্রদানকালে তারা বলেছেন, ইভিএমে ভোট নিতে কোন সমস্যা নেই, জাল ভোটেরও কোন সুযোগ নেই। তারপরও দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে আরও মতামত নেয়ার পাশাপাশি ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ইভিএমে করার মাধ্যমে এ বিষয়ে আস্থা অর্জন করতে চায় ইসি। রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জনই ইসির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়ে আস্থা অর্জনের জন্য কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দিনব্যাপী সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনার পর প্রযুক্তিবিদদের মত নিয়েছে। বিভিন্নভাবে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদেরও মতামত নেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেও ইভিএমসহ সার্বিক বিষয়ে তাদের মতামত নেয়া হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে এসে ইভিএম যাচাইয়ের সুযোগ দেয়া হবে। এর পর যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সর্বস্তরের মানুষের শতভাগ আস্থা অর্জন করতে পারলে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করাার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। তা না হলে আংশিক আসনে হবে ইভিএমে নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নবেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে হিসেবে এ নির্বাচনের আর মাত্র দেড় বছর সময় বাকি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এ নির্বাচনের ভোট পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগসহ বেশ ক’টি দল ইভিএমে ভোটের পক্ষে থাকলেও বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল এর বিপক্ষে অবস্থান করেছে। আর নির্বাচন কমিশন বলছে, ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়ার সক্ষমতা এখন নেই। তবে ১০০ আসনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সব আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক সাপোর্টসহ বিভিন্নভাবে দ্রুত সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। কারণ, এখনও ইভিএম নিয়ে রয়েছে আস্থা সঙ্কট। আগে আস্থার সঙ্কট দূর করতে হবে।
সূত্রমতে, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এক সময় ইভিএমে ভোটের বিষয়ে ব্যাপক আস্থার সঙ্কট ছিল। কিন্তু ওই দেশের নির্বাচন কমিশন সর্বস্তরের মানুষকে ইভিএমের প্রতি আস্থা অর্জন করাতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে এখন ভারতে অনেক নির্বাচন হচ্ছে ইভিএমে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে তেমন প্রশ্ন উঠছে না। তাই প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ইসি ইভিএমে ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে প্রয়োজন সাড়ে ৪ লাখ ইভিএম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে এখন আছে দেড় লাখ। তাই সব আসনে ইভিএমে ভোট নিতে হলে আরও ৩ লাখ ইভিএম প্রয়োজন হবে। আর ইভিএম কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও অন্তত এক লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সব মিলিয়ে ইসির খরচ বাড়বে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার জোগান কিভাবে হবে- সে বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। তবে সরকার চাইলে ইসিকে যে কোন সময় আর্থিক সহযোগিতাসহ যাবতীয় সাপোর্ট প্রদান করতে পারে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট হবে বলে জানান। এর আগেও আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা এমন ইঙ্গিত দেন। তবে, আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা সব আসনে ইভিএমে ভোটের কথা বলায় এই ইস্যুটি রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরে আলোচনায় স্থান পায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সব আসনে ইভিএমে ভোটের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিলেও বিএনপিসহ বেশ ক’টি বিরোধী দল ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে নেয়। এমনকি, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিও বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি। তবে অতিসম্প্রতি প্রযুক্তিবিদরা নির্বাচন কমিশনকে মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, ইভিএমে ভোট নিতে কোন সমস্যা নেই, এতে জাল ভোটেরও কোন সুযোগ নেই। তাদের এমন বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ইভিএমে ভোট সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবরই বলে থাকেন ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বিএনপি ইভিএমে ভোটের বিরোধিতা করছে। ইভিএমে ভোট হলে ভোট প্রদান ও গণনা কার্যক্রম সহজ এবং অধিকতর স্বচ্ছ হয়। এতে একজনের ভোট আরেকজনের দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ইভিএমে ভোট চাই না। কারণ, এতে ভোট এদিক-সেদিক করার সুযোগ থাকে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন ইভিএম থেকে সরে এসেছে। অতি সম্প্রতি একটি দেশে ইভিএম বাতিলের জন্য বিল পাস করা হয়েছে।
ইভিএম নিয়ে এখনও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন বিপরীতমুখী অবস্থানে, সে রকম পরিস্থিতিতে ইভিএম নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করতে নানামুখী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তারা আগে মানুষের মনের সন্দেহ দূর করতে চায়। অবশ্য ইভিএম নিয়ে বিরোধী দল, বিশেষত বিএনপির সন্দেহ মূলত একটি রাজনৈতিক অবস্থান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে নির্বাচন কমিশন চায় এ নিয়ে যেন কোন বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। বিতর্কের উর্ধে রেখে যদি ইভিএমে নির্বাচন করা যায়, তাহলেই কেবল তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ পদ্ধতিতে করার সিদ্ধান্ত নেবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা সবসময় এ কথাই বলছেন।
এর আগে দেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সব আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তবে, তখন এ নিয়ে নানামহলে বিতর্ক শুরু হলে ওই নির্বাচন কমিশন সব আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার অবস্থান থেকে পিছু হটে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। ধারাবাহিক ওই সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও কেউ কেউ আবার বিপক্ষে মত দেন। তাই এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার পর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায় নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ১১ কোটির বেশি ভোটারের জন্য এ নির্বাচনে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র প্রয়োজন হবে। আর ভোটকক্ষ প্রয়োজন হবে প্রায় পৌনে ৩ লাখ। তাই সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট করতে হলে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ইভিএম লাগবে। কারণ, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইভিএম প্রস্তুত রাখতে হবে। তা না হলে কোন কেন্দ্রে ইভিএম নষ্ট হয়ে গেলে ভোটগ্রহণ বিঘ্নিত হবে। তাই মানুষের আস্থা অর্জনের পর অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চূড়ান্ত হলেই কেবল জাতীয় নির্বাচন ইভিএমে করার সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।
ইসি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের ১৭ জুন দেশে ইভিএমের মাধ্যমে প্রথম ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে প্রতিটি ১২ হাজার টাকা করে প্রায় এক হাজার ২৫০টি ইভিএম তৈরি করিয়ে নেয়। ওই কমিশন এই ইভিএমের মাধ্যমে কোন কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভালভাবেই ভোট নেয়। এরপর বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ২০১২ সাল থেকে ইভিএমে ভোটগ্রহণ আস্তে আস্তে বাড়ানো হয়। কিন্তু কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৫ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নিতে গেলে একটি ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। এরপর নতুনভাবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। হাতে নেয়া হয় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে এই নতুন ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়। তারপর থেকে জাতীয় সংসদের প্রতিটি উপনির্বাচনে এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও কিছু ইউপি নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এ বছর ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পুরোপুরি ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয় এবং এই নির্বাচনের পর কেউ ভোট কারচুপির অভিযোগ করতে পারেনি। ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনসহ বেশ ক’টি পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনও ইভিএমে হবে। এই নির্বাচনের পর ইভিএম সম্পর্কে দেশের মানুষের ধারণা আরও স্বচ্ছ হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে কি হবে না- এ নিয়ে যখন সারাদেশে বিতর্ক তুঙ্গে, এমন এক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের, অন্য কারও নয়। তবে, রাজনৈতিক দলসহ যে কেউ তাদের প্রস্তাব দিতেই পারেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে কি হবে না- এমন কোন সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি নির্বাচন কমিশন। তবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আমরা স্বাধীন।
এর আগে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর জানান, ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সক্ষমতা ইসির নেই। ১০০ থেকে ১৩০ আসনে করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। তবে ইভিএম সম্পর্কে ভারত যেভাবে অবিশ্বাসটা কাটিয়ে উঠেছে, আমরাও সেভাবে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। তাই ইভিএমে যদি আস্থার জায়গা ঠিক করা যায়, তাহলে বর্তমান ব্যবস্থায় ১০০ থেকে ১৩০ আসনে ভোট করা যাবে। আর ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
ইসি সূত্র জানায়, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আছে, ইসি আগে সেটা দূর করতে চায়। তাই ইভিএমে ভোটের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত না হলেও ইভিএমের সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে ইভিএমের খুঁটিনাটি কারিগরি দিকগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানানো হবে। তারা নিজেদের মতো করে ইভিএম খতিয়ে দেখার সুযোগ পাবেন।
সম্প্রতি প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। এ সময় তারা ইভিএম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ইভিএম চমৎকার মেশিন। অপারেট শুরুর আগে দেখে নেয়া সম্ভব ভেতরে কি আছে। তবে কেউ বিশ্বাস করবে কি না- সেটা তার ওপর। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে ইভিএম ভার্চুয়ালি ম্যানুপুলেট করা অসম্ভব। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, আপনারা আপনাদের মতো করে এই মেশিনটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে আপনাদেরই লাভ হবে। আপনারা খুলে দেখেন সার্কিটগুলো, ভেতরে আইসিগুলো যেভাবে বসানো আছে, সেখানে ভেতরে ঢুকে ম্যানুপুলেট করা সম্ভব কি না। আমি আপনাদের টেকনিক্যাল জিনিসটা বলছি। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে এর ভেতরে ম্যানুপুলেট করার কোন সম্ভাবনা নেই।
ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, ইভিএমের প্রত্যেকটা অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড করা হয়েছে যে, একজন ইচ্ছে করলেই সেটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। এটা একটা খুবই ভাল মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি, ইসি রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ইভিএম সম্পর্কে বিস্তারিত মতামত নেয়ার চেষ্টা করবেন।
কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কারিগরি টিম পাঠিয়ে ইভিএম যাচাই-বাছাই করতে পারবে। তবে ইভিএম নিয়ে কমিশন এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করব, নাকি ১০০ আসনে করব, নাকি মোটেই করব না- অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার আগে রাজনৈতিক দলগুলোরও মতামত নেয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও আমরা অনুরোধ করব, তাদের যদি কারিগরি টিম থাকে, তাহলে তাদের নিয়ে ইসিতে এসে ইভিএম যাচাই করার জন্য। আমরা কারও মতামতকে উপেক্ষা করছি না। আমরা ইভিএম নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ইভিএম নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন, ম্যানুপুলেশন করার সুযোগ নেই। আমার কিন্তু আস্থা রাখতে হবে ওইসব মানুষের ওপর যারা এই জিনিসগুলো বোঝেন, যারা প্রোডাক্টগুলো তৈরি করেছেন তাদের ওপর। এ বিষয়ে আরও কয়েকটা বড় বৈঠক করব। তারপর রাজনৈতিক দলগুলোকেও ডাকা হবে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে লিখিতভাবে জানতে চাইব আপনারা কি কি সমস্যা পাচ্ছেন, আমাদের লিখিতভাবে অবগত করুন। আমরা যেন সমস্যাগুলো সুষ্ঠুভাবে সমাধানের সুযোগ পাই।