কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘আজাদি মার্চ’ শুরু করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। নতুন নির্বাচনের দাবিতে তার নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকরা রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে এ লংমার্চ শুরু করেন।
লংমার্চের আগে রাজধানী অবরুদ্ধ করে পুলিশ। মার্চ শুরু হওয়ার পর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। প্রদেশের বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েকজন পিটিআই বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ফলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। দেশটির বর্তমান সরকারও লংমার্চ পণ্ড করে দিতে বদ্ধ পরিকর। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইমরান বলেছেন, কোনো অবরোধই তাদের থামাতে পারবে না।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার (২৪ মে) ইমরান খান তার সমর্থকদের ‘সত্যিকারের স্বাধীনতার’ জন্য ইসলামাবাদের দিকে মার্চ করার আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার পিটিআই সমর্থক রাজধানীর দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। কিন্তু সরকার বলেছে তারা এ যাত্রার অনুমতি দেবে না। বিভিন্ন জায়গায় লং মার্চ থামাতে কন্টেইনার বসানো হয়েছে। এর জবাবে ইমরান তার তরুণ সমর্থকদের এ প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানান।
বুধবার (২৫ মে) একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হেলিকপ্টারে করে খাইবার পাখতুনখোয়ার ওয়ালি ইন্টারচেঞ্জে পৌঁছানোর পর পিটিআই কর্মীরা ইমরানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। পরে সেখান থেকে তারা সবাই ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা শুরু করেন। টুইটারে পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা গেছে, ইসলামাবাদের দিকে যাওয়ার সময় ইমরান তার সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে হাত নাড়ছেন।
খবরে বলা হয়েছে, লং মার্চ সফল করতে ইমরান তার সমর্থকদের পাকিস্তানের পতাকা বহনের আহ্বান জানিয়েছেন। ওয়ালি ইন্টারচেঞ্জ থেকে সোয়াবিতে পৌঁছানোর পর অল্প সময়ের জন্য একটি সমাবেশ করেন ইমরান খান। এ সময় তিনি বলেন, আমরা ডি-চকে যাচ্ছি। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। তার এ ঘোষণায় উল্লাস প্রকাশ করেন সমর্থকরা।
এ সময় বর্তমান সরকারকে ‘চোরের দল’ বলেও আখ্যায়িত করেন ইমরান। আরও বলেন, তারা সকলেই দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি। তারা জনসাধারণকে ভয় পায়। তাই রাস্তায় রাস্তায় কন্টেইনার বসিয়েছে।
ইমরান অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবাদকারীরা আজাদি মার্চে অংশ নেওয়ায় তাদের আটক ও হয়রানি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন জোটকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, পিটিআই সরকার কখনও কাউকে বিক্ষোভ করতে বাধা দেয়নি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার ভীত। কারণ, তারা গত ৩০ বছর ধরে জাতীয় সম্পদ লুট করেছে। আমি এই লোকদের সোয়াবি ইন্টারচেঞ্জ থেকে একটি বার্তা দিতে চাই- আপনারা যা-ই করেন না কেন; আমরা সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ডি-চকে পৌঁছাবো। আমাদের প্রতিবাদ সবসময়ের মতো শান্তিপূর্ণ হবে। ইমরান বলেন, প্রতিবাদ করা জনগণের অধিকার। তিনি দেশকে একত্রিত করে একটি উন্নত জাতিতে পরিণত করতে চান। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জাতি আমদানি করা সরকারকে মেনে নেবে না। জনগণের প্রতি সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য জিহাদের আহ্বানও জানান তিনি।
পিটিআই প্রধান আরও বলেন, সকল পাকিস্তানি, নারী, শিশু, পরিবার, যুবক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, সবাইকে সত্যিকারের স্বাধীনতার জন্য বেরিয়ে আসতে হবে।
এর আগে আরেক প্রতিবেদনে ডন জানায়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার সহযোগীদের পেশোয়ার থেকে রাজধানী ইসলামাবাদে আসার পথে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করছে সরকার।
এক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, ইমরান খানের দল ইসলামাবাদে যে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে তা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পিটিআইয়ের লং মার্চ বানচাল করতে সর্বশক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইমরান খান এবং তার সহযোগীরা লং মার্চ থেকে গ্রেফতার হতে পারেন।
এর আগে মঙ্গলবার পিটিআই কর্মী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। লাহোর, করাচি, ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডিতে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে ইসলামাবাদ যাওয়ার রাস্তাও।
পাশাপাশি ইসলামাবাদের রেড জোন রক্ষায় সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
তবে সব বাধা উপেক্ষা করে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান এবং তার সহযোগীরা নতুন নির্বাচনের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত ইসলামাবাদে অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।