বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ॥ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশকে প্রতিশ্রুত অর্থ দিন

7
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ঘানা প্রান্তে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এর সভাপতির দায়িত্বভার হস্তান্তর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঘানার রাষ্ট্রপতি নানা আকুফো-আডোকের নিকট সিভিএফ সভাপতির দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন ও বক্তব্য রাখেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় দেড়শ’ কোটি মানুষ জরুরী অবস্থার মুখে পড়ার কথা উল্লেখ করে উন্নত দেশগুলোকে এ সঙ্কট মোকাবেলায় অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতির দায়িত্বভার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের প্রতি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তিতে দেয়া উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুত অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দিতে হবে। সিভিএফের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দেড়শ’ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরী অবস্থার মুখে পড়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বকে জলবায়ু সঙ্কট থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিভিএফ বাংলাদেশের সভাপতিত্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি যথার্থ কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমি আশা করছি, এটি প্যারিস চুক্তির অধীনে উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে চাপ অব্যাহত রাখতে পারবে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিম-লে এখন সিভিএফের একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বৈধ কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বে সিভিএফের সদস্যপদ বৃদ্ধিই তার প্রমাণ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে ঘানার কাছে সিভিএফের সভাপতিত্ব হস্তান্তর করেন। ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডো, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শার্লি আয়োর্কোর বোচওয়ে, গ্লোবাল কমিশন অন এ্যাডাপটেশন বান কি মুনও ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সিভিএফের থিমেটিক এ্যাম্বাসেডর ও বাংলাদেশের ন্যাশনাল এ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অটিজম এ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার্সের চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর সিভিএফ প্রায়োরিটিজ বিষয়ক বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে সিভিএফ প্রেসিডেন্সি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। এ সময় সিভিএফের বাংলাদেশের সভাপতিত্ব থাকাকালীন দুই বছর মেয়াদকালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। ঘানার নেতৃত্বে আমরা সিভিএফের ট্রেডমার্ক নৈতিক শক্তি এবং যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করে অপূরণীয় দাবিগুলোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকব।
২০২০ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতিত্ব গ্রহণ করে। করোনা মহামারীর মধ্যে সভাপতির দায়িত্বপালনকালে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিভিএফের নতুন দায়িত্ব পেয়েছে ঘানা। সিভিএফের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোকে অভিনন্দন জানান বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা। জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এতদিন সোচ্চার থাকা সদ্য সাবেক হওয়া সিভিএফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এই ফোরামের হাল ধরেছি। তবে স্বস্তির কথা হলো আমাদের বেশিরভাগ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় সিভিএফ এখন গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিভিএফ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি তার প্রমাণ।
তিনি বলেন, শুরু থেকে কপ২৬-এর সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের মনোযোগ ছিল। মহামারীর মধ্যেও আমরা জলবায়ু সঙ্কটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। জলবায়ু প্রসঙ্গে উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়াতে দেশগুলোর জন্য ‘মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন’ শুরু করেছি। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তাদের এনডিসি জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা দিতে সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার তহবিল তৈরি করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এতে প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২১ সালে আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট করেছি। এটি পরবর্তী পাঁচ বছরে শত বিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা করবে। গ্ল্যাসগোতে তা আমরা উপলব্ধি করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা সিভিএফের মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ। আমরা উচ্চ-নিঃসরণকারী দেশগুলোকে তাপমাত্রাকে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা এবং প্রতিবছর জলবায়ু খাতে উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়াতে আমাদের দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অভিযোজন খাতে অর্থায়ন বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মেয়াদে নিযুক্ত পাঁচ থিম্যাটিক এ্যাম্বাসেডরের কাজের প্রশংসা করে বলেন, তাদের কাজে আমরা গর্বিত। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যারা উচ্চকিত, তাদের কাছে আমাদের উচ্চ আশা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন ইস্যুতে আমাদের পারস্পরিক সমর্থন অক্ষুণ্ন থাকবে। জলবায়ু ইস্যুতে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সিভিএফ-ভি২০ সংসদীয় গ্রুপ।
প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অন্য দেশগুলোও এটি থেকে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা গ্রহণের একটা ভিত্তি পাবে। নতুন সভাপতি ঘানাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে সিভিএফের নেতৃত্ব প্রেসিডেন্ট ঘড়ির নিচে থাকা আকুফো-আডোর স্থির হাতে থাকবে। ট্রোইকার সদস্য হিসেবে ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাবেক ও প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা আমি স্মরণ করছি। আমি নিশ্চিত যে, সিভিএফের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ঘানার এই সম্পর্ক দেখে তিনি খুশি হতেন।’