কাজিরবাজার ডেস্ক :
আমদানি ব্যয় কমাতে ১৩৫ ধরনের বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সরকারী এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশী ফলমূল, ফুল, প্রসাধন সামগ্রী, ফার্নিচার, গাড়ি ও গাড়ির ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ, রড ও লোহা জাতীয় পণ্যের আমদানি নিরৎসাহিত হবে। এতে করে ডলারের ওপর চাপ কমে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পণ্যগুলো আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর ফলে আরও অতিরিক্ত দেড় হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব পাবে এনবিআর। মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম সই করা প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন শুল্কহার কার্যকর করেছে। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাসকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশী ফল, বিদেশী ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ০ ও ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যা গত ২৩ মে থেকে কার্যকর হয়েছে।
এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ফুল ও ফল চাষে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। এ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষীরা ন্যায্যমূল্য পাবে এবং ফুল ও ফল চাষে উৎসাহিত হবে। এতে দেশের প্রান্তিক চাষীরা লাভবান হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকস যথেষ্ট মানসম্পন্ন এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ফার্নিচার ও কসমেটিকসে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশী পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে। এ ছাড়া এ ধরনের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরৎসাহিত করার মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিয়ত আমদানি ব্যয় বাড়ছে। চাপ বাড়ছে ডলারের ওপর। একদিনে ডলারের দাম বাড়ছে অন্যদিকে কমছে টাকার মান। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়র ডলারের ঘরে পৌঁছলেও ক্রমান্বয়ে তা কমে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এখন আবার রির্জাভের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারী সঙ্কটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জিনিসের দাম বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও করতে হচ্ছে। এর ফলে আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরকার বিলাস দ্রব্যের আমদানি সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারী চাকরিজীবীদের বিদেশ যাত্রায় দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে বিভিন্ন খাতের ১৩৫ পণ্যের ওপর বাজেটের আগে নতুন করে শুল্ক বসানো হয়েছে। এসব পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন তিন শতাংশ এবং সর্বচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করা হয়েছে। পণ্যগুলো আমদানি করতে বর্তমানে যে পরিমাণ শুল্ক কর লাগে তার সঙ্গে ‘অতিরিক্ত’ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসানো হলো। এর ফলে এসব পণ্য আমদানি নিরৎসাহিত হবে এবং রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।এই পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন সব পণ্যের আমদানি নিরৎসাহিত করতে বর্ধিত শুল্ক হার ২৩ মে থেকে কার্যকর করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ কর্মদিবস ৩০ জুন পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। তবে সরকার চাইলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সময় বাড়াতে পারে।