কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে দেশে অর্থনৈতিক অস্থিরতায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মজুদ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকারী ব্যয়ে লাগাম টানার অংশ হিসেবে জরুরী ছাড়া নতুন প্রকল্প না নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিলাস পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারী-স্বায়ত্তশাসিত, সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। অস্থিতিশীল ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে সোমবার আরেক দফা কমানো হয়েছে টাকার মান। প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ৪০ পয়সা বাড়িয়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেমিটেন্স পাঠানোর পথও সহজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্স এলে কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই পাওয়া যাবে প্রণোদনা। এছাড়া আমদানির বিকল্প ফসল হিসেবে ডাল, তেলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে ভর্তুকির আওতায় ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি নির্ভর ভোগ্যপণ্য দেশে উৎপাদন বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও ডলার চাপ কমাতে সরকারের সুদ ক্ষতিপূরণ সুবিধার আওতায় ব্যাংকগুলোকে রেয়াতি সুদ হারে ঋণ বিতরণের এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
করোনার স্বাভাবিক হওয়ার পর সব ধরনের পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। সেই চাহিদার কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। সবশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্য সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় আরও চড়ছে দাম। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে নতুন উচ্চতায় উঠেছে। গত বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৬০ ডলার। সোমবার সেই তেল ১১১ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে এর দর ১৩৯ ডলারে উঠে গিয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে ৮২ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ। শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। মহামারীর পর চাহিদা বাড়ায় জ্বালানি তেল ছাড়াও খাদ্যপণ্য (বিশেষ করে গম), ভোজ্যতেল, শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি), শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ সব ধরনের জিনিসের দামই বেড়েছে। গত বছরের মার্চে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮৫০-৯০০ ডলার। বর্তমানে এই তেল ১ হাজার ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে মোট আমদানি ব্যয়ের ৭০ শতাংশের মতো খরচ হয়েছে রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও অন্য পণ্য আমদানিতে। একই সঙ্গে এ খাতে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিও বেড়েছে। তৈরি পোশাকের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। গত বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০ কাউন্ট মানের সুতার দাম ছিল ৩ ডলারের মতো। বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪ দশমিক ২০ থেকে ৪ দশমিক ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। এখন তা ৪ দশমিক ১০ থেকে ৪ দশমিক ১৫ ডলারে নেমেছে। জানতে চাইলে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানিতে বেশ চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। ব্যালান্স অফ পেমেন্ট ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু আমদানি বাড়ায় তারপরও চাহিদা মিটছে না।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে অর্থনীতিতে আমদানি বাড়াকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়ে থাকে। বলা হয়, আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এতদিন আমরাও সেটা বলে আসছি। কিন্তু এখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ৫০ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির নেই। এখন এটা কমাতেই হবে। তা না হলে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়ব আমরা।’
আহসান মনসুর বলেন, ‘দাম বাড়ায় সরকারের জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে গ্যাসে ভর্তুকি বেড়েছে, সারে বেড়েছে। বিদ্যুতে বেড়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ভর্তুকি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ পড়বে।’ দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের রফতানি আয় বাড়ছে। এটা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতেই হবে আমাদের। এখন বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য যাতে আমদানি না হয়, সেদিকে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ এ ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার।
বিলাসী পণ্য আমদানি কমানোর উদ্যোগ : দ্রুত বাড়তে থাকা চাহিদার বিপরীতে ডলার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিলাসবহুল গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানিতে ৭০ শতাংশ নগদ জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে ডলার-সঙ্কট সামাল দিতে গাড়ি, মুঠোফোন, সিগারেটসহ ৩৮ পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান। দেশটিতে ডলারের বিনিময় মূল্য এরই মধ্যে ২০০ রুপী ছাড়িয়েছে। এ কারণে সঙ্কট সামাল দিতে বিলাসপণ্য আমদানি নিষিদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশেও সাময়িক সময়ের জন্য বিলাসপণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করার বা বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানির চাপ কমাতে এই পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য বিলাসপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা বন্ধ করে দিতে হবে। যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তাও বাতিল করতে হবে। যেসব খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, আপাতত সেসব পণ্য আমদানি বন্ধ করা যেতে পারে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আয় বাড়াতে সাময়িক সময়ের জন্য প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা বাড়ানো যেতে পারে। পোশাকের যে রফতানি আয় আটকে আছে, তার প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। এতে আয় বাড়বে। আর খোলাবাজারে ডলারের দাম এত বাড়ল কেন, তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা খতিয়ে দেখতে পারে। কেউ বেশি মুনাফার আশায় মজুদ করছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলারের দামের পার্থক্য যাতে সর্বোচ্চ ২-৩ টাকা বেশি হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঢালাও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা : বিদেশে গিয়ে বা দেশে বসে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে এ ধরনের কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে বা এ খাতে কোন ডলার ছাড় না করতে সরকারী-স্বায়ত্তশাসিত, সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ গত রবিবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার ফলে বেসরকারী খাতের কোন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসিয়াল কোন কাজে বিদেশ যেতে পারবেন না। এর আগে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিষিদ্ধ করে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করে। এরপর অধস্তন আদালতের বিচারকদের জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের আবেদন না করতে নির্দেশনা আসে। সার্কুলারে বলা হয়, বর্তমানে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী, ব্যাংকিং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অনুষদ সদস্য, বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও কর্মরত কোম্পানি, ফার্ম, ইনস্টিটিউট, এনজিওর কর্মকর্তাদের পক্ষে বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশ নিতে অংশগ্রহণ ফি বাবদ ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় করতে পারে। তবে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ ধরনের কাজে তাদের অনুকূলে বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় করা যাবে না।
টাকার মান কমল আরও ৪০ পয়সা : দেশের বাজারে মার্কিন ডলারের সঙ্কটের কারণে হু হু করে বাড়ছে দাম। বিক্রি করেও উর্ধগতি ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ৪০ পয়সা বাড়িয়ে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে একদিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও ৪০ পয়সা কমে গেল। ২৭ দিনের ব্যবধানে চার দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হলো ১ টাকা ৭০ পয়সা। সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। একদন আগেও প্রতি ডলারে লেগেছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। গত ১০ মে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ২৭ এপ্রিল ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেশি দরে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯৭-৯৮ টাকায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের দাম পুনঃনির্ধারণ করে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা করা হয়েছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ও দেশের আমদানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে।
রেমিটেন্স পাঠানোর পথও সহজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক : প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের শর্ত রইল না আর। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও পণ্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে রিজার্ভে টান পড়ার মধ্যে রেমিটেন্স পাঠানোর পথ সহজ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এখন থেকে পাঁচ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্স এলে কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই পাওয়া যাবে প্রণোদনা। সোমবার সিদ্ধান্তটি জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে। বৈধ উপায়ে রেমিটেন্সের বিপরীতে প্রণোদনার প্রক্রিয়া সহজ করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে গেলে রেমিটারকে (অর্থপ্রেরক) বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউসের কাছে বিস্তারিত কাগজপত্র জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটি তুলে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘পাঁচ হাজার ডলার অথবা পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্স পাঠালে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য প্রবাসীর কাগজপত্র বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন থেকে সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৈধ উপায়ে দেশে রেমিটেন্স প্রেরণের বিপরীতে রেমিটেন্স প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রদানে রেমিটারের কোন কাগজপত্র ব্যতীত বিদ্যমান হারে (২.৫০ শতাংশ) রেমিটেন্স প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রযোজ্য হবে।’ সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর বিপরীতে কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে। প্রতি ডলারের বিপরীতে নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত পাওয়া যাবে আরও আড়াই টাকা। ডলারের সবশেষ বিনিময় হার ঠিক হয়েছে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। এর সঙ্গে আড়াই টাকা যোগ হয়ে পাওয়া যাবে ৯০ টাকা ৪০ পয়সা। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
আমদানির বিকল্প হিসেবে ফসল চাষে ঋণ বাড়ানোর তাগিদ : আমদানির বিকল্প হিসেবে ডাল, তেলবীজ, ভুট্টা প্রভৃতি চাষে ভর্তুকির আওতায় ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদ হারে সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমদানি কমাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে। সে কারণে ডলারের ওপর চাপ কমাতে সরকারের সুদ ক্ষতিপূরণ সুবিধার আওতায় ব্যাংকগুলোকে রেয়াতি সুদ হারে ঋণ বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কৃষিপণ্য হিসেবে মুগ, মসুর, খেসারি, ছোলা, মটর, মাষকলাই; তেলবীজ হিসেবে সরিষা, তিল, তিসি, চীনাবাদাম, সূর্যমুখী, সয়াবিন; মসলা জাতীয় ফসল হিসেবে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, জিরা ও শস্য হিসেবে ভুট্টা চাষে রেয়াতি সুদে ঋণ বিতরণ করতে হবে। ঋণ বিতরণের ১ বছর পরে প্রচলিত কৃষি ঋণের সুদ হার ৮ শতাংশের স্থলে ব্যাংকগুলো ৪ শতাংশ সুদ আদায় করবে এবং বাকি ৪ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নিতে পারবে।