ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে অশনি

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়া অশনি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুর্বল অবস্থায় এটি আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতর ভারত উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশে তা-ব চালানো প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণি বা আম্ফানের মতো ধ্বংসাত্মক হবে না অশনি।
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি উপকূলে আছড়ে পড়ছে। বিরামহীন বৃষ্টিপাত হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলে। এতে উপকূলীয় জেলাগুলোর নদী ও খালের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চার সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় বন্দরে ফিরেছে শত শত মাছ ধরার ট্রলার। সকাল থেকেই কয়েক শ’ ট্রলার বিষখালি, বলেশ্বর ও সুন্দরবনের খালগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় নিতে শুরু করে। দিন শেষে সাগরের সব ট্রলার তীরে ফিরে এসেছে। ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে সব সরকারী আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে চলছে সংস্কার কাজ।
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে তিন বিভাগে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই তিন বিভাগে কোথাও কোথাও ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার থেকে ৮৯ মিলিমিটার বর্ষণ হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানায়, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগর-আরব সাগর নিয়ে গঠিত উত্তর ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তৈরি ২০২২ সালের প্রথম ঘূর্ণিঝড় অশনি। এর নামটি দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সিংহলী ভাষায় অশনি অর্থ ক্রোধ বা রোষ। তবে ভাগ্য ভাল উপকূলীয় বাসিন্দাদের। অশনির ‘ক্রোধ’ ধীরে ধীরে কমে আসছে!
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) তথ্যমতে, বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ৬টার দিকে ঝড়টির অবস্থান ছিল ভারতের বিশাখাপট্টম থেকে ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং পুরি থেকে ৬৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে। সে সময় ঘণ্টায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার বেগে অন্ধ্রপ্রদেশ-ওড়িশা উপকূলের দিকে এগোচ্ছিল অশনি।
আইএমডি জানিয়েছে, প্রত্যাশিত গতিবিধি অনুসারে ঝড়টি মঙ্গলবারের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ-ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। তবে স্থলভাগে আঘাত হানার আশঙ্কা খুবই কম। ক্রমাগত শক্তি হারিয়ে ঝড়টি আগামী দুদিনের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
সাধারণত মে মাসে গ্রীষ্মের চূড়ান্ত অবস্থায় বঙ্গোপসাগরের ওপর সৃষ্ট ঝড়গুলো উত্তর ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এসময় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও তার শক্তিবৃদ্ধির মতো আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে উষ্ণ সমুদ্র। তবে এখন সামুদ্রিক তাপমাত্রা সেরকম না হওয়ায় অশনি অতটা শক্তিশালী হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।