আজ ২৫ বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ২৫ বৈশাখের গুরুত্ব বিশেষ করে বাংলাদেশ, বাংলাভাষা ও বাঙালির জীবনে অপরিসীম। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির জীবনে এমনভাবে জড়িয়ে আছেন, যাতে প্রতিদিন তাঁকে স্মরণ করতে হয়। ‘আজ আমার জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখ- পঁচিশ বছর পূর্বে এই পঁচিশে বৈশাখে আমি ধরণীকে বাধিত করতে অবতীর্ণ হয়েছিলুম- জীবনে এমন আরও অনেকগুলো পঁচিশে বৈশাখ আসে এই আশীর্বাদ করুন। জীবন অতি সুখের।’ ২৫ পেরিয়ে ২৬-এ পা রাখার দিন কবি শ্রীশচন্দ্র মুজমদারকে এ চিঠিটি লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এর আগে তিনি জন্মদিন নিয়ে কাউকে কিছু বলেননি, লেখেননিও। এর পরের বছর থেকে ঠাকুরবাড়িতে প্রথম জন্মদিন পালন শুরু হয় কবির মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর উদ্যোগে।
ভারত বিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ব বাংলায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হতে থাকে। এভাবেই পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী ঢাকায় উদ্যাপিত হয়েছিল সাড়ম্বরে। সে সময় পাকিস্তানী শাসকশ্রেণীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও এ দেশের মানুষ পালন করেছে প্রিয় কবির জন্মদিন। এক পর্যায়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় সকল শ্রেণীর মানুষ সোচ্চার হয় নিষিদ্ধের প্রতিবাদে। এ দেশের মানুষ তাদের সুখ-দুঃখে, আন্দোলন-সংগ্রামে যে কবিকে কাছে পেয়েছে, যাঁর কবিতা, গান ব্যক্তিগত ও সমাজজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত-উদ্দীপ্ত করেছে এবং সান্ত্বনা যুগিয়েছে, সে কবিকে কখনও ছাড়তে পারে না। বিশেষ করে জাতীয় জীবনের নানা বিপর্যয়ে, ঘোর দুর্বিপাকের দিনে তাঁকে সঙ্গে রেখেছে, তাঁর সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখেছে, রেখেছে অন্তরের ভালবাসায়। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরের এই দেশে বিশাল মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথ। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাণের উচ্ছ্বসিত আবেগের সঙ্গে প্রতিবছর নানাভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে থাকে রবীন্দ্র জন্মোৎসব। একই মর্যাদায় পালিত হয় তাঁর প্রয়াণ দিবস বাইশে শ্রাবণও। রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধায় এবং বিশেষ করে তাঁর সম্পর্কে অধিকতর চর্চার জন্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি। এই ভাষার উন্নয়নে তাঁর অবদান তুলনাহীন। রবীন্দ্রনাথ এ ভাষাকে বিশ্ব অঙ্গনে সুপরিচিত ও সুখ্যাত করিয়েছেন। চিন্তায়-মননে, আনন্দে, বিষাদে তিনি বাঙালীর নিত্যসঙ্গী। আমাদের জীবনে আলোর পথে, জ্ঞানের পথে, শিক্ষা তথা আনন্দের পথে চলার প্রেরণা তিনি। তিনি উৎসাহ জোগান অন্ধকার দূর করার, পাশাপাশি কূপমন্ডুকতা ও সঙ্কীর্ণতাও দূর করতে। রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা ভাষার একজন কবি, লেখক, গীতিকার, দার্শনিক বা অন্য আরও বিশেষণে অভিহিত মহাপুরুষই নন, তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, আমাদের সবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা তিনি নিজেই বলে গেছেন। তাঁর সে কথাটি হলোÑ ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক/আমি তোমাদেরই লোক।’ আমাদের প্রাণের এই কবির স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।